১৭ বছরে বস্তিবাসী বেড়েছে ৮ লাখ

বাংলাদেশে নগরে থেকেও নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত হয়ে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ১৭ বছরে আট লাখ বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 03:28 PM
Updated : 30 June 2015, 04:58 AM

বস্তিবাসী ও ভাসমান লোক গণনায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চালানো শুমারির ফলাফলে এই চিত্র দেখা গেছে।

সোমবার এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এটি ছিল তৃতীয় ‘বস্তি শুমারি ও ভাসমান লোক গণনা’ জরিপ। এর আগে ১৯৯৭ সালে একই ধরনের জরিপ চালানো হয়েছিল।

সোমবার প্রকাশিত শুমারির ফলাফলে দেখা যায়, সারাদেশে ২২ লাখ ৩২ হাজার লোক বস্তিতে বাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ১১ লাখ ৪৪ হাজার পুরুষ, ১০ লাখ ৮৬ হাজার নারী এবং ১ হাজার ৮৫২ জন হিজড়া।

১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় বস্তি শুমারিতে বস্তিবাসীর সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৮ জন। সে হিসাবে ১৭ বছরে দেশে বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৮ লাখ ৪০ হাজার ৬৫৬ জন।

নদী ভাঙনসহ নানা কারণে জীবিকার সন্ধানে সারাদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে নগরে, যাদের বড় একটি অংশ বস্তিতে আশ্রয় নেয়। বস্তিতে গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে হয়।

এই জরিপের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাফর আহাম্মদ খান বস্তির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, এক রুমে খানার ৫ বা ততোধিক লোক একসঙ্গে বাস করে, সরকারি বা আধা সরকারি জমিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছোট ঘর, টং, ছই, টিনের ঘর, আধাপাকা ভবন বা জরাজীর্ণ দালানে বসবাসকারী মানুষকেই বস্তিবাসী হিসেবে গণনা করা হয়েছে।

শুমারি থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরার সময় জাফরের সঙ্গে বিবিএস সচিব কানিজ ফাতেমা ও বিবিএস মহা-পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে এক সপ্তাহ ধরে বস্তিতে শুমারি পরিচালনা করে বিবিএস। ১৯৯৭ সালের আগে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম বস্তি শুমারি হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১০ লাখ ৬২ হাজার ২৮৪ জন লোক বস্তিতে বাস করেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম, এ বিভাগে আছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯১৬ জন।

খুলনায় ১ লাখ ৭২ হাজার ২১৯ জন, রাজশাহীতে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৬ জন, রংপুরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন, সিলেট বিভাগে ৯১ হাজার ৬৩০ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৪৯ হাজার ৪০১ জন লোক বস্তিতে বাস করেন।

বস্তিবাসীদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৭ ভাগ ভাড়া দিয়ে থাকেন। ২৭ দশমিক ২৫ ভাগ মালিক এবং ৬ দশমিক ৯৯ ভাগ থাকেন ভাড়া ছাড়া।

ঢাকার সবচেয়ে বড় গুলশানের কড়াইল বস্তি (ফাইল ছবি)

বস্তিবাসীর মধ্যে ৮৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বিদ্যুতের সুবিধা পান বলে বিবিএসের শুমারিতে উঠে এসেছে। কেরোসিন দিয়ে আলো ব্যবহার করেন ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন।

বস্তিতে বসবাসকারীদের মধ্যে ৫২ দশমিক ৪৮ শতাংশ টিউবওয়েলের এবং ৪৫ দশমিক ২১ শতাংশ কলের পানি পান করেন।

মোট বস্তিবাসীর ৪২ দশমিক ১৯ ভাগ অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করেন বলে শুমারিতে উঠে এসেছে। ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করেন। ২১ দশমিক ১০ ভাগ টিনের টয়লেট এবং ৮ দশমিক ৬৩ ভাগ ঝুলন্ত ও কাঁচা টয়লেট ব্যবহার করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বস্তিবাসীদের ৫০ দশমিক ৯৬ ভাগ নগরে আসেন চাকরির সন্ধানে। দারিদ্র্যের কারণে আসেন ২৮ দশমিক ৭৬ ভাগ। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে আসার হার ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

প্রকল্প পরিচালক জাফর আহাম্মদ বলেন, সারাদেশের বস্তিবাসীর মধ্যে গড়ে ৩৩ দশমিক ২৬ শতাংশ লোকের অক্ষরজ্ঞান রয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন লোক রয়েছে বরিশালে। ওই বিভাগের ৪৯ শতাংশ বস্তিবাসীর অক্ষরজ্ঞান রয়েছে। এর পর রয়েছে রংপুরে ৪৩ শতাংশ। খুলনা বিভাগের বস্তিবাসীর মধ্যে অক্ষরজ্ঞান রয়েছে ৩৮ দশমিক ৫৪ শতাংশের। চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ, ঢাকা বিভাগের ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগের ২৬ দশমিক ১১ শতাংশ বস্তিবাসী অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন।

সারাদেশের বস্তিবাসীর মধ্যে ৮৪ দশমিক শূন্য ৭ ভাগ ভূমিহীন, ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ জমির মালিক।

বস্তিবাসীর মধ্যে ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ মুসলিম, ৬ দশমিক ৭৩ ভাগ হিন্দু রয়েছে।

বস্তিতে বসবাসকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ গৃহবধূ। ১৩ দশমিক ৩৩ ভাগ ছাত্র, গার্মেন্টসকর্মী ১৩ দশমিক ১৮ ভাগ, ব্যবসায়ী ৭ দশমিক ৫৮ ভাগ, রিকশাচালক ৬ দশমিক ৯২ ভাগ, চাকরিজীবী ৬ দশমিক ৭১ ভাগ এবং ৬ দশমিক ৪১ ভাগ গৃহকর্মী।

২৯ শতাংশ ধূমপায়ী

বাংলাদেশের ২৯ দশমিক ৫৮ ভাগ মানুষ ধূমপান করেন। এর মধ্যে ৩৮ দশমিক ৬৫ ভাগ পুরুষ এবং ২০ দশমিক ৪৪ ভাগ নারী।

সোমবার বিবিএসের ‘হেলথ এন্ড মরবিডিক স্ট্যাটাস সার্ভে ২০১৪’ শীর্ষক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য জানানো হয়। ‘বস্তি শুমারি ও ভাসমান লোক গণনা’ শুমারির পাশাপাশি এই জরিপ চালানো হয়।

প্রকল্প পরিচালক জাফর আহাম্মদ বলেন, দেশের ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ লোক মদ পান করে। গাঁজা সেবন করে শূন্য দশমিক ৩১ ভাগ মানুষ। শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ লোক ফেনসিডিল পান করে। হেরোইন ও ইয়াবাসেবী শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।