মেয়েদের বিয়ের বয়স কমালে উৎসাহিত হবে হেফাজত: মিজানুর

মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানো হলে তা ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে উৎসাহিত করবে বলে সরকারকে সতর্ক করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 01:30 PM
Updated : 29 June 2015, 01:30 PM

উপদেষ্টা-আমলাদের ‘অসৎ পরামর্শ’ শুনে প্রধানমন্ত্রীকে এই ধরনের পদক্ষেপ না নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কন্যা শিশুর ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৮ বছর বহাল রাখতে হবে’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানান মিজানুর রহমান।

৬৯টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’ এই সভার আয়োজন করে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে তার চারপাশের আমলা এবং উপদেষ্টারা মেয়েদের বিয়ের বয়স সংশোধনের বিষয়ে অসৎ পরামর্শ দিচ্ছেন। বয়স কমানো হলে এটি হেফাজতে ইসলামকেই উৎসাহিত করা হবে।”

মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর থেকে কমানো যায় কি না- ২০১৩ সালে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তা পর্যালোচনার কথা উঠার পর থেকে তার বিরোধিতা চলছে বিভিন্ন মহল থেকে।

এর মধ্যেই সম্প্রতি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিয়ের বয়স কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে সরকার লুকোচুরি করছে মন্তব্য করে মিজানুর রহমান বলেন, সরকারকে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

বাল্যবিয়ে আইন সংশোধনের জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যদি আইনটি সংশোধন করে বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৬ তে নামানো হয়, তাহলে তা বিদ্যমান সমস্ত অর্জনের পরিপন্থি হবে, রাষ্ট্রের পেছন দিকে যাত্রা হবে।”

“বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’টির নাম ‘বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ আইন’ করার দাবিও জানান তিনি।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, ১৮ বছরের যে কোনো মানুষই জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী শিশু। তাই ১৮ বছরের নিচে কারও বিয়ে হলে তা শিশুবিবাহ হিসেবেই চিহ্নিত হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।

“বাংলাদেশ বিভিন্ন নারী ও শিশুবান্ধব আইন করেছে এবং বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের বর্তমান ধোঁয়াশা অবস্থান এ সমস্ত অর্জনের সম্পূর্ণ বিপরীত।”

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, “সরকারের কোনো সুযোগই নেই আন্তর্জাতিক সমস্ত চুক্তি ও সনদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বিয়ের বয়স কমানোর।”

এই আইনটি সংশোধিত হওয়া মানে খোদ সরকার থেকেই ‘বৈবাহিক ধর্ষণের’ সুযোগ করে দেওয়া, মন্তব্য করেন তিনি।

ইউনিসেফের জেন্ডার বিশেষজ্ঞ রেশমি বসু বলেন, “বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করা হলে কিশোরী গর্ভধারণের হার বেড়ে যাবে, ফলে এই সূচকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে।”

বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে মানুষের ‘নিরাপত্তাহীনতাকে’ দায়ী করে তা দূর করার পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

“বিদ্যমান বাস্তবতায় অনেকেই মনে করেন, মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়াই নিরাপদ। নিরাপত্তাহীনতার কারণে যদি কোনো অভিভাবক তার কন্যাশিশুকে বিয়ে দেন, তবে তার জন্য দায়ী অবশ্যই রাষ্ট্র।”

সভায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হামিদা হোসেন, উইমেন ফর উইমেনের জাকিয়া কে হাসান, কর্মজীবী নারীর রোকেয়া রফিক বেবী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের শাহিন আনামও বক্তব্য রাখেন।