বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 11:02 AM
Updated : 29 June 2015, 11:02 AM

সোমবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় বাজেট ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছে, “যে বাজেট আমরা দিয়েছি, সেখানে পাঁচ পার্সেন্ট ঘাটতি আছে। এটা বেশি কিছু না।

“এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে তিন লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটকে জনকল্যাণমুখী আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, এই বাজেটে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।

বাজেট নিয়ে আলোচনায় পুঁজিবাজার নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

“পুজিবাজার একটা সমস্যা ছিল। সমস্যা সমাধানে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। অনেকে দেশেই নাই। দেশ ছেড়ে ভেগে গেছে।”

পুজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “মাঝে মধ্যে, খেলার চেষ্টা করা হয়। আমরা সজাগ আছি বলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।”

ভবিষ্যতে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পুঁজিবাজার ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

লাইসেন্স ছাড়া মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফাটকা কারবারি বন্ধে আইন করা হয়েছে।

বাংলাদেশকে উদার, গণতান্ত্রিক, বিজ্ঞানমনস্ক এবং ডিজিটাল দেশ হিসাবে পরিচিত করতে সরকারের কাজ করার কথাও বলেন সরকার প্রধান।

“বাংলাদেশের জনগণের আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশা বেশি। সেজন্য, আমরা দিন রাত কাজ করি।”

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত যোগাযোগ চুক্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি নেপাল ও ভুটানের পক্ষ হয়ে ভারতকে সবসময় অনুরোধ করেছি।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমা চুক্তি বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা এটাকে তার সরকারের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাফল্য বলেও দাবি করেন।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের দিকে ইঙ্গত করে বলেন, “আওয়ামী লীগ যত কাজ করেছে, সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন ক্ষমতায় থাকতেও সেই কাজ করেনি।”

প্রধানমন্ত্রী ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যের শুরুতেই প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সবাইকে রমজানের মোবারকবাদ জানান।

একটানা সপ্তম বাজেট উপস্থাপনের জন্য মুহিতকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার সুচিন্তিত বাজেট প্রতিক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে।”

বিশ্ব অর্থনীতিতে ১৪ ধাপ এগিয়ে ৪৪তম এবং ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতার ভিত্তিতে তিন ধাপ এগিয়ে ৩৩তম স্থান অধিকার করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।

“বাংলাদেশ বন্যার দেশ, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ, বাংলাদেশ দারিদ্র্যের দেশ, বাংলাদেশ দুর্নীতির দেশ- এটা শুনলে খারাপ লাগত।”

“বাংলাদেশে এখন আর হতদরিদ্র নেই,” বলেন তিনি।

খাদ্য আমদানি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, “গম উৎপাদন কিছুটা কম বলে বাইরে থেকে আনতে হয়। ভবিষ্যতে আর আমদানি করতে হবে না।

“কৃষককে সব রকম ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা সব রকম সহযোগিতা দিচ্ছি বলেই তারা উৎপাদনমুখী হচ্ছে।”

নারীদের দক্ষতা বাড়াতে আলাদা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

“বাল্য বিবাহ যেন না হয় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। একটা আইনও আমরা করতে যাচ্ছি।”

শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার কথাও বলেন তিনি। আগামী অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ ব্যক্তি বয়স্ক ভাতা পাবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।

গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সরকারের প্রয়াসের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ধনী-গরিব বৈষম্য কমে আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া নতুন কিছু না। ‘৯৬ এ ক্ষমতায় এসে দেখলাম বহু লোক অবৈধভাবে বিদেশে বসবাস করছে। আমরা তাদের বৈধ করতে উদ্যোগ নিই।

“২০০৯ এ ক্ষমতায় এসেও দেখলাম সৌদি আরবে আট লাখ এবং মালয়েশিয়ায় সাড়ে ছয় লাখ (অবৈধ)। মালয়েশিয়ার সরকার খুবই বিরক্ত ছিল, তারপরও আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সব ঠিক করি।”

অবৈধভাবে বিদেশ না যেতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “তারপরও কিছু মানুষ বাইরে যাওয়ার নামে সাগরে জীবনযাপন করছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কয়েকশ’ লোককে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি।”

ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগে একটা পরিবারে একখানা গাড়ি ছিল, এখন তিনখানা। ড্রাইভাররা যায় আসে। অনেকে নিয়ম মেনে চলে না।”

ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছি। ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় করেছি। অসুস্থতার জন্য মাঠে যেতে পারিনি। ইচ্ছে ছিল, মাঠে যাব। তাদের হাতে ট্রফি তুলে দেব।”

কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোলমাল হচ্ছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু কোথাও সেশনজট নাই।”

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মাটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। জিরো টলারেন্স টেরোরিজমের বিরুদ্ধে।”

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তাদের বাংলাদেশের উন্নতিটা ভালো লাগে না।”

পরিবেশের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করছেন পরিবেশবাদীরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।