একাদশে ভর্তি: জটিলতার পর জটিলতা

কারিগরি জটিলতা কাটিয়ে মধ্যরাতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ করা হলেও সেই তালিকা না পেয়ে রাজধানীর নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছে না।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2015, 10:13 AM
Updated : 29 June 2015, 10:25 PM

মেধা তালিকায় নাম না থাকলেও ভিকারুননিসা নূন স্কুল তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি উত্তীর্ণদের এই কলেজে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভিড় জমিয়েছেন। তবে ভর্তি জটিলতা নিয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটিসহ দায়িত্বশীল কেউ কথা বলছেন না।

কয়েকদিন দেরির পর কারিগরি জটিলতা কাটিয়ে রোববার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে একাদশে ভর্তিচ্ছুদের মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়।

প্রথম দফায় ভর্তির জন্য ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৪ জন মনোনীত করা হয়েছে। ২৯ ও ৩০ জুন এবং ১ ও ২ জুলাই শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হতে পারবেন।

www.xiclassadmission.gov.bd ওয়েবসাইটে রোল নম্বর দিয়ে সার্চ দিয়েই ফল জানতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা ডাউনলোড করতে পারবে।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, শিক্ষাবোর্ড মনোনীত তালিকা ধরেই সব কলেজকে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। এই নিয়মের বাইরে এবার শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো সুযোগ নেই।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘যোগ্যতা’ থাকা সত্ত্বেও তার স্কুল থেকে পাস করা বেশ কয়েকজন ছাত্রীর নাম বোর্ডের মেধা তালিকায় আসেনি।

“বোর্ডের মেধা তালিকায় তাদের নাম আসুক আর নাই আসুক, আমরা তাদের (এই স্কুল থেকে পাসকরা ছাত্রী) ভর্তি করাব। কারণ ১০ বছর ধরে তারা এখানে পড়াশোনা করছে।”

মেধা তালিকার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করালে মোট আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে কি না- এই প্রশ্নে সুফিয়া বলেন, “দুই হাজার আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ভিকারুননিসা। প্রয়োজনে আমরা বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাব।”

মেধা তালিকায় নাম না দেখে ভিকারুননিসার বেশ কয়েকজন ছাত্রী সোমবার কলেজে এসে কান্নাকাটি শুরু করেন। পরে অধ্যক্ষ তাদের নিজের কক্ষে নিয়ে ভর্তির নিশ্চয়তা দেন বলে একজন ছাত্রী জানান।

এদিকে সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনো তালিকা পাননি বলে জানিয়েছেন মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো তালিকা না পাওয়ায় কাউকেই ভর্তি করাতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও কলেজে ভিড় করছেন। আমরা সবাই বেশ উদ্বিগ্ন।”

এই শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে দেখা দিয়েছে জটিলতা

ভর্তি ও ক্লাস শুরুর সময় বার বার বদলানো নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই অধ্যক্ষ।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বেলা ২টা পর্যন্ত কোনো তালিকা পাননি তারা।

তালিকা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা যেসব শিক্ষার্থী মোবাইলে এসএমএস পেয়েছে, আমরা শুধু তাদের ভর্তি করেছি।

“অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষার্থী আইডিয়ালে চান্স পেয়েছে, আমরা তাদের ভর্তি করাতে পারছি না।”

ঢাকা সিটি কলেজ, ট্রাস্ট কলেজ, উত্তরা সিটি কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

ভর্তি কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিকও এনিয়ে সোমবার কোনো কথা বলেননি।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ এ বিষয়ে কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক আসফাকুস সালেহীনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে কলেজ পরিদর্শক কোনো কথা বলেননি।

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে গঠিত ‘অভিভাবক ঐক্য ফোরাম’র সভাপতি জিয়াউল কবীর দুলু সব শিক্ষার্থীর ভর্তির নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা যেন ঝামেলাহীনভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারে, সেজন্য যা যা করার তাই করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিপা সুলতানা বলেন, কলেজে ভর্তি জটিলতার বিষয়ে তাদের কাছেও অভিযোগ এসছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকে বিজ্ঞান শাখা থেকে পাস করলেও তাকে নাকি কমার্সের তালিকায় রাখা হয়েছে। আবার অনেকে কম জিপিএ পেয়েও নাকি চান্স পেয়েছে। এসব কীভাবে হল? কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে মেধা তালিকা করা হয়েছে?”

কলেজে সন্তানদের ভর্তি নিয়ে এবার অভিভাবকরা বেশ ‘হতাশ’ বলেও জানান তিনি।