সাংবাদিকদের নিয়ে বক্তব্যে অনড় নাছির

মাদকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্যের বির্তকের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির আবারও বললেন মাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম ‘পর্যাপ্ত’ ভূমিকা পালন করে না।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2015, 09:19 PM
Updated : 28 June 2015, 12:15 PM

শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গত শুক্রবার নগরীর মুসলিম হলে জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাছির বলেন, অত্যন্ত সচেতনভাবে সাংবাদিকরা মাদকের বিরুদ্ধে কলম ধরা থেকে বিরত থাকেন।

অনেক সাংবাদিক প্রতিদিন মাদক গ্রহণ করেন বলে দাবি করে নাছির বলেন, তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে।

শনিবার চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) এক বিবৃতিতে আ জ ম নাছিরের এ বক্তব্যের বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানায়।

এরপরই বিকালে প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, “গতকাল এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিষয়ে মেয়র একটি বক্তব্য দিয়েছেন। কোন দৃষ্টিকোণ থেকে এ বক্তব্য দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা উনি দেবেন।

“দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি সবক্ষেত্রে সাংবাদিকরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। তাই কোনো বক্তব্য দেয়ার সময় সব বিবেচনা করেই দেওয়া উচিত।”

পরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র নাছির বলেন, “এখানে একটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে।

“গতকাল মাদকের অপব্যবহার ও পাচার রোধে একটি অনুষ্ঠান ছিল। এখনো বলছি- দেশে মাদক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ”

অনুষ্ঠানে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের হিসেবে ৫০ লাখ লোক মাদকসেবী।

“ওই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলার এসপি জানান মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখ। বাস্তবে এ সংখ্যা এক কোটি হবে বলেও জানান তিনি। উনি (পুলিশ সুপার) বলেছিলেন- অনেক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে যারা মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি।”

মেয়র বলেন, “এরপর আমি বক্তব্য দিই। আমি এখনো বলছি- বাংলাদেশের ভবিষ্যত রক্ষা করতে হলে তরুণ প্রজন্মকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে মিডিয়ার ভূমিকা যতটা হওয়া দরকার ততটা নয়। কার্যকরভাবে তারা এগিয়ে আসেনি।”

আ জ ম নাছির বলেন, “বিভিন্ন ফোরামে সাংবাদিক ভাইয়েরাই আমাকে প্রশ্ন করেন- সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কি করবেন? এখনও দায়িত্ব নিয়ে বলছি। সন্ত্রাস ও মাদক অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত।  

“সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাংবাদিক ভাইরা জাতির বিবেক। তারা অত্যন্ত সচেতন। বিনয়ের সঙ্গে তাই অনুরোধ করছি। মাদক বাদ রেখে সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারবেন না।”

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলেন, “মাদকসেবীরা রাজনীতির ব্যানারে সন্ত্রাস করে। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থেকে রাজনৈতিক পারফিউম ব্যবহার করে। আমি ভুক্তভোগী।

“আপনারাও লেখেন অমুক ছাত্রলীগ নেতা চাঁদাবাজি করছে। পুলিশ কমিশনার আর কাউন্সিলরদের বলেছি যারা মাদক বিক্রি করে তাদের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।”

নাছির বলেন, “এখন মেয়েরাও মাদক গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে বিভাজনের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বাস থেকে অনুভূতি থেকে বলেছি, কাউকে আঘাত করতে বলিনি।”

মাদক নিয়ে দীর্ঘ ১২ মিনিট বক্তব্য দিলেও ‘সাংবাদিকরা মাদকসেবী’ এ বিষয়ে আগের দিনের দেওয়া বক্তব্য বিষয়ে নাছির কোনো মন্তব্য করেননি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম।

প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসীন চৌধুরী প্রমুখ।