এ নিয়ে দুই দিনে কক্সবাজারে বৃষ্টি, ঢল ও ধসে মোট ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা শনিবার বিকালে জানান, জেলার টেকনাফ, রামু, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
চকরিয়ায় আরও চারজনের মৃত্যু হয় বলে পরে রাতে জেলা পুলিশের এএসপি মো. মাসুদ হোসেন জানান।
কর্মকর্তারা জানান, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নে পাহাড় ধসে মা-মেয়ে, রামুর গর্জনিয়ায় নিখোঁজ দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার, চকরিয়ার কাকরা, কৈয়ারবিল, ডুলাহাজরা ও ডেমুসিয়ায় পানিতে ভেসে চারজন, চকরিয়ার খাসিয়াখালি ইউনিয়নে বিদ্যুতের খুঁটি পানিতে পড়ে তড়িতাহত হয়ে দুজন এবং পেকুয়া উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢল ও ধসে জেলার বিভিন্ন স্থানে আরও আটজন নিহত হন, যাদের মধ্যে পাঁচজন রামুতে, টেকনাফের সেন্টমার্টিনে দুইজন এবং কক্সবাজার সদরে পাহাড় ধসে একজনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার বান্দরবানে পাহাড় ধসে মারা যান দুই ভাই-বোন।
এদিকে টানা পাঁচদিনের ভারি বর্ষণের পর শনিবার থেকে বৃষ্টি কমে আসায় জলমগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে এখনও বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল।
টেকনাফ থানার পরিদর্শক আতাউর রহমান খোন্দকার জানান, ভারি বর্ষণে বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় খাদের নিচে গড়ে তোলা বসতবাড়ির উপর পাহাড় ধসে মাটিচাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু হয়।
এরা হলেন- শামলাপুর এলাকার আবুল মঞ্জুরের স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৪৫) ও মেয়ে শাহেনা আক্তার (১৫)।
এরা হলেন- ওই এলাকার বশির আহমদের মেয়ে কামরুন্নাহার বেগম (২২) এবং এরশাদ উল্লাহর মেয়ে তরিকা হাসনাত (৯)।
ইউএনও জানান, রামুতে দুর্গত লোকজনের আশ্রয়ের জন্য ৩৮টি কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাদের শুকনো খাবার, খিঁচুড়ি, পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছে। তবে পানি কমতে শুরু করায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া লোকজনের অনেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, কাকরা ইউনিয়নে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে শুক্রবার থেকে নিখোঁজ এক কিশোর এবং কৈয়ারবিলে পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা ৩/৪ বছর বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে।
এদের মধ্যে কিশোর কাউছাইন রহিম (১৩) কাকরা ইউনিয়নের প্রপার কাকরা এলাকার ফরহাদ রেজার ছেলে। কৈয়ারবিল থেকে উদ্ধার শিশুর নাম পরিচয় জানা যায়নি।
পুলিশের চকরিয়া সার্কেলের এএসপি মো. মাসুদ হোসেন জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলম (২৭) এবং ডেমুসিয়া ইউনিয়নের মো. আসিফ (৭) পানিতে ভেসে যায়। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে খাসিয়াখালি ইউনিয়নের সুবর্ণা দাস (৩০) এবং ডুলাহাজারার কামাল উদ্দিন (৩৫) তাদের বাড়ির সামনে জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে তড়িতাহত হয়ে মারা যান।
পেকুয়া উপজেলার চেয়ারম্যান শাফায়াত আজিজ রাজু জানান, শনিবার ভোররাতে সদর ইউনিয়নের নতুন পাড়া এলাকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মায়ের কোল থেকে পড়ে পানিতে ভেসে গিয়ে আড়াই বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা বলেন, টানা বর্ষণে চকরিয়া, পেকুয়া ও রামু উপজেলার ৯০ ভাগ, কক্সবাজার সদরের ৭০ ভাগ এবং উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ২৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
জেলার আটটি উপজেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউএনওকে প্রধান করে আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া জেলার ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ১৪১টিতে দুর্গত লোকজন আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া লোকজনের মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার, খিঁচুড়ি ও পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গত লোকজনের মাঝে ১৪৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আটটি মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে জেলায় কর্মরত সরকারি সব চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি ।
জেলা প্রশাসক অনুপম বলেন, দুর্যোগে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে রোববারের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।