এনআইডিতে যুক্ত হচ্ছে শুধু ‘বিচারপতি’ পদবি

আদালতের রায়ের ভিত্তিতে নামের আগে ‘বিচারপতি’ যুক্ত করে তিন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2015, 05:22 AM
Updated : 26 June 2015, 05:44 PM

বাংলাদেশে কেবল উচ্চ আদালতের বিচারকরাই জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের আগে পদবি ব্যবহারের এই সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসি গত বুধবার তিনজনের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন অনুমোদন করে।

সে অনুযায়ী হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক নাঈমা হায়দার ও মির্জা হোসেইন হায়দারের  নামের আগে ‘বিচারপতি’ যুক্ত করে তাদের এবং মির্জা হোসেইন হায়দারের স্ত্রীর পরিচয়পত্র সংশোধন করতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটার নিবন্ধনের সময় পেশাসহ অনেক ধরনের তথ্য নেওয়া হয়। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রের দৃশ্যমান অংশে পদবি বা পেশার বিষয়টি নামের আগে রাখা হয় না।

২০১১ সালে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের নামের আগে পদবি যোগ করার রায় আসে।

“রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্ট বিভাগে নিয়োজিত ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নামের আগে ‘বিচারপতি’ যুক্ত করার নির্দেশনা থাকায় তা প্রতিপালন করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”

অবশ্য ২০১৩ সালে আইন সংশোধনের পর বিদ্যমান আইনে কারও নামের আগে-পরে পদবি ব্যবহারের সুযোগ নেই বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।

বিদ্যমান আইনে ‘নাম’ এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, জন্ম নিবন্ধন সনদ বা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সনদের ভিত্তিতে ভোটারের নাম হবে।

“তবে এ আইনে নামের সংজ্ঞা সংযোজনের আগে ভোটার তালিকায় উক্ত নামের ক্ষেত্রে এ সংজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।”

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, উচ্চ আদালতের বিচারকদের জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের আগে ‘বিচারপতি’ পদবি সংযুক্ত করতে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হলে ২০১১ সালের ১৬ জুন আদালত রুল জারি করে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি ‘রুল অ্যাবসল্যুট’ করে রায় দেয় হাই কোর্ট।

“সাংবিধানিক পদে থাকা মাননীয় বিচারকদের অবস্থানের কথা বিবেচনা করেই এ রিট করা হয়। পাসপোর্টসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নামের আগে ‘বিচারপতি’ যুক্ত রয়েছে তাদের। সেক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রেও তা ব্যবহারের পক্ষে রায় আসে,” বলেন এ আইনজীবী।

মাস তিনেক আগে এ রায় ও আদেশের কপি, পাসপোর্টের কপিসহ বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও নাইমা হায়দার তাদের নামের আগে পদবি যুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করেন। তাদের সঙ্গে আবেদন করেন মির্জা হোসেইন হায়দারের স্ত্রী সাদিয়া রওশন জাহান হায়দার। তার আবেদনে স্বামীর নামের আগে ‘বিচারপতি’ যুক্ত করার কথা বলা হয়।

ইসির আইন শাখার যুগ্মসচিব শাহজাহান জানান, “আদালতের আদেশ যখন হয় তখন নামের আগে পদবি ব্যবহারের কোনো বাধা ছিল না। সে অনুযায়ী আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধু এ তিনজন নয়, এখন থেকে বিচারপতিদের সবাই নামের আগে পদবি যোগ করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে পারবেন।”

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন জানান, আদালতের রায় ও ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তারা তিনজনের পরিচয়পত্র সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে অন্য কোনো পেশার নাগরিকদের পদবি যোগ করার সুযোগ এতে নেই।

“জন্মের সময় যে নাম থাকবে তা-ই বহাল হয় তার সনদে। পদবি যোগ হয় পরে। উপাধি বা পেশা কখনো নামের অংশ হতে পারে না। পেশার পরিচিতি তথ্যভাণ্ডারে তো রয়েছেই। নির্ধারিত পরিচিতি নম্বরে বা স্মার্টকার্ডের বারকোডে তা সংরক্ষিত থাকবে। পরিচয়পত্রে দৃশ্যমান থাকবে না।”

নাগরিকদের পেশাগত পরিচয় নামের আগে যোগ করতে গেলে নানা ধরনের অসুবিধা তৈরি হতে পারে জানিয়ে সুলতানুজ্জামান বলেন, “নামের হেরফেরে বিদেশ গমন, স্কলারশিপ, ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে। সার্টিফিকেটে এক নাম, পরিচয়পত্রে আরেক নাম, জন্ম সনদে ভিন্ন নাম- এমন হলে তথ্যভাণ্ডারেও বিভ্রান্তি তৈরি হবে।”

আর এ সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হলে আইন আবার সংশোধন করতে হবে বলেও এনআইডি মহাপরিচালক জানান।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ভোটার নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহের সময় (সরকারি চাকরি, বেসরকারি চাকরি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংকার, ব্যবসা, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র/ছাত্রী, গৃহিনী, দিনমজুর,  বিচারক, ঠিকাদার, ড্রাইভার, নার্স, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবীসহ অন্তত ৪০টি পেশার ঘর রয়েছে ফরমে।