লিচুতে ছিটানো কীটনাশকে ৮ শিশুর মৃত্যু: আইইডিসিআর

দিনাজপুরে বিষক্রিয়ায় ২১ দিনে ৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যারা লিচু বাগানে ছিটানো কীটনাশক ও রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছিল বলে চিকিৎসকরা বলছেন।

দিনাজপুর প্রতিনিধিমোর্শেদুর রহমান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2015, 04:31 PM
Updated : 24 June 2015, 04:36 PM

দেড় থেকে ৬ বছর বয়সী এই শিশুরা গত ২৯ মে থেকে ১৮ জুনের মধ্যে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অল্প দিনের ব্যবধানে প্রায় একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া শিশুদের অসুস্থতার বিষয়ে নিরীক্ষা চালিয়েছে  রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিহত শিশুরা কীটনাশক ছিটানো লিচু বাগানের আশপাশে গিয়ে বিষে আক্রান্ত হয়েছিল। মৃত শিশুদের রক্ত ও লিচু পরীক্ষায় বিষাক্ত কীটনাশকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

“ওই শিশুদের বাড়ি ও লিচু বাগান পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে তাদের মৃত্যুর কারণ কীটনাশক মিশ্রিত লিচুর সংস্পর্শ বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।”

দিনাজপুরের বিরল, বীরগঞ্জ, কাহারোল ও খানসামা উপজেলায় গিয়ে মারা যাওয়া শিশুদের বসত বাড়ির চারপাশ পর্যবেক্ষণ করেন আইইডিসিআরের গবেষকরা।

মাহমুদুর রহমান জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ওই শিশুদের প্রত্যেকের বাড়ি লিচু বাগান সংলগ্ন। তারা লিচু বাগানে বিচরণ করেছে, লিচু খেয়েছেও। ওসব লিচু বাগানে ব্যাপক মাত্রায় কীটনাশক ছিটানো হয়েছিল।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আবদুল ওয়ারেস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২৯ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে ১২ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়, যাদের ১১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত শিশুরা রাতে ঘুমানোর পর চিৎকার করে কেঁদে উঠে। এরপর তাদের খিঁচুনি শুরু হয়।হাসপাতালে ভর্তির ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

লিচুবাগানে রাসায়নিক ছিটানোর এই ছবি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে তোলা। (ফাইল ছবি)

আইইডিসিআরের গবেষকরা আট শিশুর নমুনা সংগ্রহ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ১৮ জুন সর্বশেষ নমুনা সংগ্রহের পরও হাসপাতালে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদেরও একই ধরনের সমস্যা নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল।

মৃত শিশুরা হল,  বীরগঞ্জ উপজেলার ফুল কুমার (২), শামীমা (৫), স্বপন (৬), মামুন (৫), বিরলের মিনারা ( ২ বছর ৬ মাস), খানসামার রিমি (৪), চিরিরবন্দরের আবু সায়েম (৪), কাহারোলের ইয়্সামিন (৪ বছর ৬ মাস), পার্বতীপুরের জেরিন ( ৫), বিরলের সামিউল (১ বছর ৬ মাস) এবং সাকিব (৩)।

তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পাননি বলে দাবি করেছেন দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা।

এর আগে ২০১২ সালেও লিচু বাগানে ছিটানো কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় ২২ দিনে ১৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে।

আইইডিসিআরের গবেষকরা জানান, বর্তমানে লিচু বাগানে ২৩ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরেও কিছু অপরিচিত কীটনাশক ব্যবহার করছেন চাষীরা। এছাড়া এন্টি ফাঙ্গাল, গ্রোথ হরমোন নাম দিয়ে আরও কিছু রাসায়নিক ব্যবহার হচ্ছে যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।