নটরডেম, হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফে পরীক্ষা নিয়েই ভর্তি

মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নিয়ম ঢাকার তিনটি নামি কলেজের ক্ষেত্রে স্থগিত করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2015, 06:58 AM
Updated : 10 June 2015, 06:46 AM

এর ফলে রাজধানীর নটরডেম, হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফ কলেজে পরীক্ষা নিয়েই একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

ওই তিন কলেজের অধ্যক্ষের করা আবেদন শুনে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের অবকাশকালীন বেঞ্চ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা ওই তিন কলেজের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেন।

মন্ত্রণালয়ের ওই ভর্তি নীতিমালার ছয়টি ধারা কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ববহিভূর্ত’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছে আদালত।

শিক্ষা সচিব, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিদর্শককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে ৬ জুন একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ক্লাস শুরু হবে ১ জুলাই।

বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতেই একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম রেখে গত ১ জুন নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ৩০ মে প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির জন্য এই নীতিমালা।

গত কয়েকবছরের মতো এবারও নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিয়াস রোজারিও  রোববার মন্ত্রণালয়ের ওই নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র ভর্তির জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। তার সঙ্গে এবার আবেদন করেন হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার শিখা গোমেজ এবং সেন্ট জোসেফ কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশন।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার ছয়টি ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয় তাদের রিট আবেদন।

সোমবার তাদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।

আদেশের পর আবেদনকারীদের আইনজীবী শাওন সাংবাদিকদের জানান, পরীক্ষা ছাড়া একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সরকারের নীতিমালার ওই ছয় ধারার কার্যকারিতা নটরডেম, হলিক্রস ও সেন্টজোসেফ কলেজের ক্ষেত্রে স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।

“এর ফলে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে আইনগত কোনো বাধা থাকল না।”

ওই নীতিমালার ৩.১ ধারায় বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য কোনো বাছাই বা পরীক্ষা হবে না। এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে।

বোর্ড অনুমোদিত সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য অনলাইন বা টেলিটক মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে বলে ৪.১ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

৪.২ ধারায় বলা হয়েছে, অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী টেলিটকের মাধ্যমে ১৫০ টাকা আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বোচ্চ পাঁচটি কলেজে পছন্দক্রম দিতে পারবে।

আর অনলাইন আবেদন বা এসএমএস পাওয়ার পর কলেজগুলো এই নীতিমালা অনুযায়ী আসন সংখ্যার সমান সংখ্যক ভর্তিযোগ্য প্রার্থীর মেধাক্রম নিজেদের ওয়েব সাইট ও নোটিস বোর্ডে প্রকাশের ব্যবস্থা করবে বলে ৫.৩ ধারায় বলা হয়েছে।

৯.১ ধারায় বলা হয়েছে, এই নীতিমালা দেশের সব সরকারি বা বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

আর ৯.৩ ধারায় মন্ত্রণালয় বলেছে, এই নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও এমপিও বাতিল করা হবে এবং সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, “নীতিমালার এসব ধারা স্বেচ্ছাচারী ও অস্বচ্ছ।এতে অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

হাই কোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন কি না- এ প্রশ্নে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।