হাসিনা-মোদীর উপস্থিতিতে সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময়

দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে ছিটমহল বিনিময়ে স্থল সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় করেছে বাংলাদেশ ও ভারত, যার মাধ্যমে দশকের পর দশক অবরুদ্ধ জীবন কাটানো অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের মুক্তির পথ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2015, 10:50 AM
Updated : 6 June 2015, 11:37 AM

শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা কক্ষে এই দলিল বিনিময়ের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর নিজ নিজ দেশের পক্ষে এসব দলিল হস্তান্তর করেন। এ সময় ওই চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যপদ্ধতি সম্বলিত পত্রও বিনিময় করা হয়।

দলিল বিনিময়ের এই মূহূর্তটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ এক টুইটে বলেছেন, “এই মাহেন্দ্রক্ষণটিকে শুধু ঐতিহাসিক বললেও কম বলা হয়।”

গত মে মাসে পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল নামে পরিচিতি পাওয়া সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ার পর তাতে অনুসমর্থন জানায় ভারতের মন্ত্রিসভা, স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এই সমস্যার সমাধানের পরই বাংলাদেশ সফরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন মোদী।   

উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের স্থল সীমান্ত নিয়ে এই সমস্যাটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়।

এর আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হলেও তা আটকে ছিল ভারতের দিকে। কারণ ভূমি ছাড়তে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন।

এর মধ্যে ২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়।

এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী।

তবে কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও সচেষ্ট ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে মানান তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, এতে রয়েছে ৩৭ হাজার মানুষের বাস। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার। ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে শুমারিতে এই তথ্য পাওয়া যায়।

ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর; অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলে আসছেন, চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭১১০ একর জমি) ভারতের অংশ হয়ে যাবে। আর ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭১৬০ একর জমি) বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে।

ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারত যে প্রায় ১০ হাজার একর জমি বেশি হারাবে, সে জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না বলে প্রটোকলে উল্লেখ রয়েছে।

এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে।

প্রটোকলের আওতায় অপদখলীয় ভূমি নিয়ে বিরোধের অবসানও ঘটবে। এতে ভারত অপদখলীয় ২৭৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে। আর ২২৬৭ একর জমির উপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে।

আর চুক্তি ও প্রটোকল অনুযায়ী ছিটমহলবাসী তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নিতে পারবেন।