প্রযুক্তির প্রসারে শিক্ষার্থীদের মান এমনিতেই বাড়ছে: মন্ত্রী

পাবলিক পরীক্ষায় পাশের হার বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়ছে না বলে সমালোচনার জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রযুক্তির প্রসারের কারণে ‘শিক্ষার্থীদের মান এমনিতেই বাড়ছে’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2015, 04:20 PM
Updated : 2 June 2015, 04:50 PM

মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের (এটুআই) মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম কর্মসূচির তিন বছর পূর্তির এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, “আমার পরিচিত কয়েকজন শিক্ষক আছেন তারা প্রতিবারই বলেন, ‘পাশ করছে বেশি কিন্তু মান কমে যাচ্ছে। আপনারা যেভাবে বলছেন তাতে মান ধরে রাখতে তো মাটি খুঁড়ে নিচে চলে যাওয়া উচিত ছিল।

“মান বাড়ছে, আপনাদের বাড়াতে হবে না এটা এমনিতেই বাড়ছে। তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রযুক্তির মধ্যে বড় হচ্ছে, আমাদের দেশে এখন ১০ লাখ মোবাইল ফোন, চার কোটি ৩০ লাখ ইন্টারনেট কানেকশন- এগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মকে নতুনভাবে মান বৃদ্ধির বাস্তবতা তৈরি করে দিয়েছে। এর উপরেই সে আরও বেশি অগ্রসর হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে।”

শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

“আমরা চেষ্টা করব ক্লাশ এইট পর্যন্ত এমন শিক্ষা দিতে যেন সে জ্ঞানার্জন করতে পারার সঙ্গে দক্ষতাও অর্জন করতে পারে।”

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন এখন থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠানো হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

ক্রমান্বয়ে সব পাঠ্যবই ডিজিটাল ফরমেটে করার পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, “আপাতত ক্লাশ সিক্সের বই ট্যাবলেটে কীভাবে দেওয়া যায় এ ব্যবস্থা আমরা করব। এটা হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের উপরে বইয়ের কোনো বোঝা থাকবে না।”

২০১২ সালের ২০ মে ‘তথ্য-প্রযুক্তিতে শিক্ষা নয়, বরং শিক্ষায় তথ্য’ স্লোগান নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এটুআই এর মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম কর্মসূচি, যার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাকে আকর্ষণীয়, আনন্দময় ও কার্যকর করাই ছিল মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের উদ্দেশ্য।

এটুআই এর দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে সারা দেশে ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক ও উচ মাধ্যমিক এবং চার হাজার ৫০০টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে।

এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও ডিজিটাল কনটেন্ট বিষয়ক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।  

প্রশিক্ষিত শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করে তা ক্লাসে ব্যবহার করছেন। শিক্ষকদের তৈরি কনটেন্টগুলো  ‘শিক্ষক বাতায়ন’ (teachers.gov.bd) নামের শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করা হয় এবং একজন শিক্ষকের কনটেন্ট অন্য শিক্ষকরা সহজেই সংগ্রহ ও ব্যবহার করতে পারেন।  

এটুআই বলছে, শিক্ষক বাতায়নে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার সদস্য শিক্ষক এবং ৪০ হাজারের বেশি ডিজিটাল কনটেন্ট রয়েছে।

এটুআই এর অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “শিক্ষকদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। কারণ এখনও আমরা কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে পারিনি।

“আমি বলব, আপনারা আপনাদের মনের দরজাগুলো যখন খুলবেন তখনই এই মাল্টিমিডিয়া কনসেপ্ট কার্যকর হবে।”

অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পরিচালনায় সফলভাবে নেতৃত্ব প্রদান, জেলার সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে নিবন্ধন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ/কর্মশালা আয়োজন এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত মনিটরিং ও মেনটরিংসহ শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে অবদানের জন্য পঞ্চগড় জেলার জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বগুড়া ও সিলেট জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকতা, রংপুর টিচার্স ট্রেইনিং কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ময়মনসিংহ ও ঢাকা টিচার্স ট্রেইনিং কলেজের একজন শিক্ষক প্রশিক্ষককে ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এ্যাওয়ার্ড ২০১৫’ প্রদান করা হয়।

এছাড়াও ‘মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট প্রতিযোগিতা-২০১৪’-এর বিজয়ী ৩৪ জন শিক্ষক এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সফলভাবে পরিচালনার জন্য জেলা পর্যায়ের ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় ১ম পুরস্কারপ্রাপ্ত ৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে ‘বর্ষসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০১৫’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মেছবাহ উল আলম, এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।