সাংবাদিকদের কথা শুনল ইসির তদন্ত কমিটি 

ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের বিষয়টি ভোট কর্মকর্তা ও পুলিশ অস্বীকার করলেও শুনানিতে সেদিনের বর্ণনা দিলেন সাংবাদিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2015, 11:34 AM
Updated : 2 June 2015, 11:34 AM

এ অবস্থায় ‘সত্য উদঘাটনে’ প্রয়োজনে নির্বাচনী কর্মকর্তা, পুলিশ ও সাংবাদিকদের মুখোমুখি করার কথা জানালেন তদন্ত কমিটির একজন সদস্য।

মঙ্গলবার অন্তত দশ সাংবাদিক তদন্ত কমিটির কাছে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ২৮ এপ্রিলের পুরো ঘটনা মৌখিক ও লিখিতভাবে তুলে ধরেন।

নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন সাংবাদিক প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনা তদন্তে ঢাকার ৩০টি কেন্দ্র চিহ্নিত করে। এসব কেন্দ্রে বাধা পেয়েছেন এমন সাংবাদিকদের মঙ্গলবার ডাকা হয়।

অবশ্য তদন্ত কমিটির কাছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, পুলিশ, পর্যবেক্ষক ও নির্বাহী হাকিমদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল; কোনো সাংবাদিককে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

তদন্ত কমিটির সামনে সাংবাদিক সুজয় মহাজন বলেন, “নির্বাচনে শাহাজাহানপুরের মাহবুব আলী ইনস্টিটিউট ভোটকেন্দ্রে একটি দল ব্যালট পেপারে সিল মারছিল। দায়িত্ব পালনরত নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমি মারধরে শিকার হই।”

তবে পুলিশের সহায়তায় হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পান বলেও জানান তিনি।

সুজয় মহাজন অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তার মোবাইল ফোন, পত্রিকার পরিচয়পত্র ও নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া পরিচয়পত্রও কেড়ে নেয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, ভোটের পরদিন ২৯ এপ্রিল শাহাজাহানপুর থানায় ঘটনাটির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয় এবং সেই জিডির কপি শুনানিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির একজন জানিয়েছে, এর আগে শুনানিতে অংশ নেওয়া মাহবুব আলী ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বরত এসআই  মেহেদী হাসান হামলার ঘটনাটি অস্বীকার করেন। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি হামলার বিষয়ে তাকে কেউ জানায়নি বলেও জানান।

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে উত্তরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে হামলার শিকার হন সাংবাদিক অমিতোষ পাল।

তিনি বলেন, “উত্তরা থানায় হামলার বিষয়ে রিপোর্ট করতে গেলে থানা কর্মরত অফিসার আমাকে উল্টো নানা ধরনের হয়রানিমূলক প্রশ্ন করতে থাকে। এ সময় শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ থাকায় তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না আমার । ক্ষোভে  জিডি না করে ফিরে আসি আমি।”

শুনানিতে অংশ নিয়ে ওবায়েদ অংশুমান বলেন, “কমলাপুর হাইস্কুল কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে পুলিশের সামনেই সিল মারা হচ্ছিল- এ খবর সংগ্রহ করতে গেলে আমি হামলা শিকার হই।”

হামলার সময় সেখানে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট থানার ওসি নীরব ভূমিকায় ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের বিষয়ে ‘প্রকৃত ঘটনা’ উদঘাটন নিয়ে শঙ্কা প্রকার করেন অনেক সাংবাদিক।

শুনানিতে অংশ নিয়ে তারা বলেন, যারা ভোট পরিচালনা করেছে তারা জানে এসব ঘটনা অস্বাভাবিক। সিইসিও জানেন। অথচ কেন্দ্রের দায়িত্বে যারা ছিল তারা বলছে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। এখন তদন্ত কমিটির সামনে বলেছি। এরপর ইসি কিভাবে বিষয়টি মূল্যায়ন করবেন এখন সেটা দেখার বিষয়।”

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহা. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ সঠিক দেন। আমরা সে অনুযায়ী তদন্ত রিপোর্ট করব। আমাদের  কাজ হচ্ছে শুনানি করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া।প্রতিবেদন পেলে ইসি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।”

ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার ভিন্ন বক্তব্যের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ইসির উপ সচিব আব্দুল অদুদ বলেন, “দরকার হলে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা সাংবাদিক, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও পুলিশের মুখোমুখি শুনানি করব।”

শুনানিতে দশ সংবাদিক

বেলা ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী শুনানি হয় সেগুন বাগিচাস্থ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। এতে জিলফুল মুরাদ, মোশতাক আহমেদ, মাহবুবুল হক ভুঁইয়া, এম এ মামুন, শুভঙ্কর কর্মকার, অমিতোষ পাল, ওবায়েদ অংশুমান, হুমায়ুন কবির ও সুজয় মহাজন অংশ নেন।

এর আগে গত ১৭ মে, ২০ মে ও ২৪ মে তিন দফায় শুনানি হয় প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ ও নির্বাহী হাকিমদের।

ভোটের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে সাংবাদিকদের বাধা-নাজেহালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ঢাকার প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইসি।

চলতি মাসে ইসির কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি।