চট্টগ্রামে পাসের হার কমেছে, জিপিএ-৫ও

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে গত তিন বছরের মধ্যে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয়ই কমেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2015, 03:30 PM
Updated : 30 May 2015, 03:44 PM

এবার পাসের হার ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা ২০১৪ সালে ছিল ৯১ দশমিক ৪০ এবং ২০১৩ সালে ছিল ৮৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ।

এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন সাত হাজার ১১৬ জন। যা গত দুই বছরের তুলনায় যথাক্রমে তিন হাজার ৭৬৮ ও ৪২২ জন কম। ২০১৪ সালে ১০ হাজার ৮৮৪ এবং ২০১৩ সালে ৭ হাজার ৫৩৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। 

চতুর্থ বিষয়সহ এবার মোট এক হাজার ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। গণিত ও উচ্চতর গণিতে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়েছে।

শনিবার সকালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কার্যালয়ে ফলাফল ঘোষণা করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষার্থীরা উদ্বেগ ও ভয় নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। এসব কারণে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে।”

তবে গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতির কারণও এতে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাহবুবও বলেন, “মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী খারাপ করেছে গণিতে। আর বিজ্ঞানের চেয়ে এই দুই বিভাগে পরীক্ষার্থী সংখ্যা বেশি থাকায় সামগ্রিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।”

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা গণিতে ভালো হওয়ায় এই বিভাগে পাসের হার গত দুই বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। 

গত বছরের তুলনায় এবছর শুধু গণিতেই পাসের হার কমেছে প্রায় সাত শতাংশ। আর বোর্ডের অধীনে তিন পার্বত্য জেলাসহ কক্সবাজার জেলায় এই পাসের হার কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।  

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে তারা শুধু নবম ও দশম শ্রেণিতে গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়েছে।

“এতেতারা ভালোভাবে বিষয়টি আয়ত্ত করতে পারেনি। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে গণিতের ভালো শিক্ষকের সংকট আছে।”

পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের প্রভাবও কাজ করেছে বলে মনে করেন তিনিও।

শিক্ষা বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় ২০১৪ সালে গণিতে পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ যা এবছর কমে হয়েছে ৯২ দশমিক ০৫ শতাংশ।

এছাড়া কক্সবাজারে গণিতে পাসের হার ৯০ দশমিক ৯১ শতাংশ যা গত বছর ছিল ৯৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এছাড়া রাঙামাটিতে এবছর গণিতে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ যা ২০১৪ সালে ছিল ৯১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এদিকে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে গণিতে পাসের হার কমেছে গত বছরের তুলনায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ।   

খাগড়াছড়িতে গত বছর গণিতে পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ০৮ শতাংশ যা এবছর প্রায় ১৮ শতাংশ কমে দাঁড়িযেছে ৭৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বন্দরবানে এবছর গণিতে পাসের হার ৭৩ দশমিক ০৭ শতাংশ যা গতবছর ছিল এবছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি ৯৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

চট্টগ্রাম জেলায় এবছর মোট পাসের হার ৮৫ দশমিক ২৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। 

বোর্ডের অর্ন্তভুক্ত কক্সবাজার জেলার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

রাঙামাটিতে এবছর পাসের হার ৭০ দশমিক ৯৯ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮০ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এবছর সবচেয়ে বেশি পাশের হার কমেছে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়। এই বছর দুই জেলাতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পাশের হার কমে গেছে।

খাগড়াছড়িতে এই বছর পাশের হার ৬৮ দশমিক ৭২ শতাংশ যা গত বছর ছিল ৮৩ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলায় এবছর পাশের হার ৬৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ যা গত বছর ছিল ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

মানবিক ও বাণিজ্যে কমেছে জিপিএ-৫

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পাসের হার পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রতিটি বিভাগে কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।

এবছর বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৩৪২ জন। যা গত বছর ছিল সাত হাজার ৩৯১ জন।

এছাড়া মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ জন যা গত দুই বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৯৯ ও ৩৮ জন কম।

২০১৪ ও ২০১৩ সালে মানবিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১৬ ও ৫৫ জন। 

এদিকে ব্যবসায় শিক্ষায় এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৫৭ জন। এই সংখ্যা গত দুই বছরের তুলনায় যথাক্রমে দুই হাজার ৬২০ জন ও এক হাজার ৪৯১ জন কম। ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল দুই হাজার ৬২০ ও ২০১৩ সালে এক হাজার ৪৯১ জন।  

পাসের হার বেশি মহানগরে

এবছর চট্টগ্রাম মহানগরে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৮২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে পাসের হার ৮৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত কক্সবাজার জেলার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, রাঙামাটিতে ৭০ দশমিক ৯৯, খাগড়াছড়িতে ৬৮ দশমিক ৭২ এবং বান্দরবান জেলায় পাশের হার ৬৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

শীর্ষ ১০

চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯৫ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম হয়েছে কলেজিয়েট স্কুল। দ্বিতীয়- ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (৯১ দশমিক ১৬),  তৃতীয়- ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ (৯১ দশমিক ০০),  চতুর্থ-  বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (৮৮ দশমিক ৬৫), পঞ্চম- ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৮৭ দশমিক ৮০), ষষ্ঠ- সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় (৮৭ দশমিক ৪৪), সপ্তম- ক্যান্টনম্যান্ট ইংলিশ স্কুল (৮৬ দশমিক ৪৪), অষ্টম- চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (৮৫ দশমিক ৯৫), নবম- সিলভার বেলস গার্লস হাই স্কুল (৮৫ দশমিক ৫৮), দশম- চট্টগ্রাম মরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (৮৫ দশমিক ০১)

৪০ প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস

এবারের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে, যা গত বছর ছিল ৯১ টি।

এবছর শতভাগ পাস করা চট্টগ্রামের পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল- কলেজিয়েট স্কুল, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যান্টনম্যান্ট ইংলিশ স্কুল, চট্টগ্রাম পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কাফকো স্কুল অ্যান্ড কলেজ। 

জিপিএ-৫ এ সেরা ৫

চট্টগ্রাম বোর্ডে এবছর সর্বাধিক জিপিএ-৫ পেয়েছে কলেজিয়েট স্কুল থেকে ৩৭৭ জন। এরপর যথাক্রমে আছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (৩০৩), ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (২৮৫), সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় (২৫৯) ও চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫)।