সমর ব্যয়ের একটি অংশে নির্মূল করা যায় দারিদ্র্য: শেখ হাসিনা 

সব দেশের সামরিক ব্যয় কমানোর মাধ্যমে বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য সমূলে উৎপাটন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2015, 12:47 PM
Updated : 31 May 2015, 02:05 PM

তিনি বলেছেন, “সমরসজ্জার পেছনে যে ব্যয় হয়, তার একটু অংশ যদি দারিদ্র্য দূর করার জন্য ব্যয় হত, তাহলে আর বিশ্বে দারিদ্র্য থাকত না।”

২০১২ সালে বিশ্বের সব দেশের সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি (১.৭৬ ট্রিলিয়ন) ডলার উল্লেখ করে শনিবার ঢাকায় ‘দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন শেখ হাসিনা।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূর করতে প্রতি বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

সামরিক ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ৮ দিনের ব্যয় ৩০ বিলিয়ন ডলার।

“২০১২ সালে গোটা বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় বিশ্বের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মাথাপিছু ব্যয় হয়েছে ২৪৯ ডলার।”

এর বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষের চাহিদা অনুযায়ী খাবার না পাওয়ার কথা আসে শেখ হাসিনার কথায়।

“খাদ্য নিরাপত্তা শুধু খাদ্য উৎপাদনের উপর নির্ভর করে না। আমাদের এ বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, তা সব মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট।”

প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করাকে জটিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য, ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বণ্টন ব্যবস্থা, সংঘাত, অধিক জনসংখ্যা, খাদ্য ও কৃষি নীতিমালা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয় খাদ্য প্রাপ্যতাকে প্রভাবিত করে।

“সভ্যতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হলেও আজও এ বিশ্বের সকল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এখানে যখন কথা বলছি, তখনও বিশ্বের নানাপ্রান্তে কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে আছেন।

“কিন্তু এ বিশ্বের একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে কেন? কেন তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে?”

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি ৫০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। প্রতি নয়জনে একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই বিশ্বের একটি মানুষও যেন অনাহারে না থাকে, অপুষ্টিতে না ভোগে। আমরা প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে চাই।”

খাদ্য অপচয়ের মতো ‘বিলাসিতা’ পরিহারের আহ্বানও জানান তিনি।

“ফাইভ স্টার হোটেলে এত খাবার সাজিয়ে দেয়, তার অল্পই ব্যবহার হয়। আমরাও অনেক খাবার ফেলে দেই, আর কত শিশু অভুক্ত থাকে।”

অন্তত দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে এই অঞ্চলের সবার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

সার্ক ফুড ব্যাংক দ্রুত বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার একজন বিপন্ন মানুষকেও যেন খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারাতে না হয়, সেজন্য সার্ক খাদ্য ব্যাংক হোক বিপদের বন্ধু।

“দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃবৃন্দের কাছে আমার অনুরোধ, আসুন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সার্ক খাদ্য ব্যাংক প্রকল্পটি যথাসম্ভব দ্রুত ও কার্যকরভাবে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রতিষ্ঠিত করি।”

দক্ষিণ এশিয়ার কৃষকদের হাতে নিজেদের শস্যবীজের অধিকার সংরক্ষিত থাকার ওপরও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

হিংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পৃথিবীর সকল দেশেই, সকল প্রান্তেই মতানৈক্য এবং মতভিন্নতা থাকবে। রাজনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির নানা ইস্যুতে থাকবে মতভিন্নতা।”

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় শান্তিতে গত বছর নোবেল পুরস্কারজয়ী ভারতের কৈলাস সত্যার্থীকে অভিনন্দন জানান।

অনুষ্ঠানে কৈলাস সত্যার্থী দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গণ ও সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণের তাগিদ দেন।

বিশ্বের ৮০ কোটিরও বেশি ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতি দৃষ্টি দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ক্ষুধার্ত মানুষরা হাতে চাঁদ চায় না, এরা খাওয়ার জন্য রুটি চায়।”

চকলেটের মূল উপাদান কোকো ক্ষেতে আইভরি কোস্টের শিশুদের কাজ করার কথা তুলে ধরে সত্যার্থী বলেন, অথচ ওই শিশুরা চকলেটের স্বাদ পায়নি।

অ্যান্টি প্রোভার্টি প্ল্যাটফর্ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনসহ ৪৩টি সংগঠন তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন আয়োজন করে।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নেপালের ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অন রাইট টু ফুডের জাতীয় সমন্বয় কমিটির জাতীয় সমন্বয়ক সর্বরাজ খড়কা, অ্যান্টি পোভার্টি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক মহসিন আলী।