শনিবার সকালে থানার হাজতখানার বাথরুমে মো. ইছহাক মিয়া (৫০) নামের ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করে বলে পুলিশ জানায়।
তবে নিহতের ভাই দ্বীন মোহাম্মদ ও জামাতা শওকত আলী অভিযোগ করেন, পুলিশী হেফাজতে মারধরের কারণে ইছহাকের মৃত্যু হয়েছে।
সুরতহাল করতে যাওয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী রাজীব উল হাসান জানান, নিহতের গলার ডান পাশে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ মোটা কালো ফাঁসের দাগ আছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এছাড়া কপালের ডান পাশে দুই সেন্টিমিটার পরিমাণ চামড়া ছিঁড়ে গেছে। বাম বুকের নিচের অংশে একটি আঘাতের দাগও আছে।”
নিহত ইছহাক মিয়া কর্ণফুলী থানার শিকলবাহার মাস্টার হাট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
নগরীর কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন এলাকায় কোমল পানীয় পরিবেশক প্রতিষ্ঠান জাহিদ এন্টারপ্রাইজে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন ইছহাক।
গত ২৭ মে রাতে জাহিদ এন্টারপ্রাইজে চুরির চেষ্টার ঘটনায় ইছহাককে আসামি করে মামলা করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক জাকির খান। ওই মামলায় শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের দাবি।
এদিকে ইছহাককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভিন্ন ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে।
কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইছহাক মিয়া জাহিদ এন্টারপ্রাইজের নৈশ প্রহরী ছিল। ঘটনার দিন তিনি রাতে দায়িত্বে ছিলেন।
ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় শুক্রবার রাতে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন ইছাহাককে ধরে থানায় নিয়ে আসে বলে জানান তিনি।
ইছহাকের মেয়ে জামাই শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাতে কাজ শেষে প্রতিদিন সকালে বাড়ি চলে যেতেন বাবা। বৃহস্পতিবার সকালেও তিনি বাড়ি আসেন।
“বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে অফিস থেকে তাকে ফোন করে বলা হয়- এখন যে নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব তিনি অসুস্থ। এ কথা শুনে বাবা শহরে যান।”
শওকত আলী বলেন, বৃহস্পতিবার অফিসের লোকজন আর কিছু জানায়নি। শুক্রবার বাবাকে কোতোয়ালী থানায় নেওয়ার কথা জানায়।
“শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে থানায় গেলে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি পুলিশ। খাবার দিতে চাইলে এক সিপাহি দুইশ টাকা চায়। আমরা টাকা ও খাবার কোনোটাই দিইনি।”
ওসি জসীম উদ্দিন বলেন, শুক্রবার রাতে ইছাহকসহ মোট তিনজন আসামি থানা হাজতে ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন গোয়েন্দা পুলিশের গ্রেপ্তার করা আসামি।
“সকালে ইছাহাক বাথরুমে ঢুকে নিজের পড়নে থাকা ফুল হাতা শার্টের একদিক বাথরুমের ভ্যান্টিলেটরে ও অন্যদিক গলায় লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন”, বলেন তিনি।
ইছহাক আত্মহত্যা করতে পারে না মন্তব্য করে তার ভাই দ্বীন মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে।”
শুক্রবার সকালে থানায় ইছাহাকের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সাথে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি বলেও অভিযোগ নিহতের ভাইয়ের।
নিহতের জামাতা শওকত বলেন, “সকালে থানায় গিয়ে দেখা করতে চাইলে এক পুলিশ সদস্য হাজতখানা থেকে এসে জানান বাবা আত্মহত্যা করেছে।