‘সমঝোতার’ কমিটির জাতীয় প্রেস ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহণ

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে ‘সমঝোতা’র মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2015, 11:51 AM
Updated : 6 August 2015, 11:50 AM

ভোট ছাড়াই সভা করে কমিটি গঠনের দুদিন পর শনিবার এর সদস্যরা প্রেস ক্লাবের কমিটি কক্ষে বৈঠক করেন।

তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ক্লাবের দায়িত্ব নিয়েছি। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই।”

১৭ সদস্যের নতুন এই কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে বলে জানান কামরুল ইসলাম।

অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ নতুন কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটি (তাদের কমিটি) নির্বাচিত আরেকটি কমিটির কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, এর বাইরে পারে না।

“ক্লাবের কোনো দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন হয়নি, সেহেতু দায়িত্ব দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তথাকথিত কমিটি কোনো বৈধ কমিটি নয়।”

আগামী ২৭ জুন ক্লাবের অতিরিক্ত সাধারণ সভা ডাকার কথা জানিয়ে আবদাল বলেন, ওই সভায়ই ক্লাবের সদস্যরাই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

শনিবার ক্লাবের তৃতীয় তলায় বৈঠক করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাংবাদিক ফোরাম, আবদালসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যের প্রায় সবাই ছিলেন ওই বৈঠকে।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পরপর জাতীয় প্রেস ক্লাবে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা।

তফসিল হলেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ‘পরিবেশ নেই’ বলে দায়িত্ব পালনে অপরাগতা জানালে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের উভয় পক্ষ একটি বৈঠক করে সমঝোতার কমিটি গঠন করে।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সদস্যদের অনুপস্থিতে ওই বৈঠকে সভাপতি করা হয় আওয়ামী লীগ সমর্থক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিএনপি সমর্থক কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে।

১৭ সদস্যের এই কমিটিতে ১০ জন রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ফোরাম থেকে, সাতজন বিএনপি সমর্থিত ফোরামের।

উত্তেজনা

নির্বাচন আটকে যাওয়ার পর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে উত্তেজনা চলছিল। সমঝোতার কমিটি গঠনের পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। 

এর মধ্যেই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষের কাচঘেরা দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা নিয়ে শনিবার দুই পক্ষের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডা হয়। 

ক্লাবের অফিসকর্মীরা সাধারণ সম্পাদকের কক্ষের (যেটিতে সৈয়দ আবদাল বসেন) তালা ভাঙার উদ্যোগ নেয়। তালাচাবিওয়ালারা জানালার গ্লাস খুলে ভেতরের লক খোলার সময় আলোকচিত্র সাংবাদিকরা সেখানে যায়।

কিছুটা হৈ চৈ শুনে নতুন কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান দ্বিতীয় তলায় কমিটি কক্ষের বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি বলেন, “কে তোমাদের তালা খুলতে বলেছে? আমরা তো এই কক্ষ কাউকে খুলতে বলিনি।”

তিনি তালাচাবিওয়ালাদের চলে যেতে বলেন। ঠিক ওই সময় সৈয়দ আবদাল তাদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে সেখানে আসেন।

তিনি উচ্চ কণ্ঠে বলতে থাকেন, “আমি সাধারণ সম্পাদক। আমার রুম কে খুলতে বলেছে? কে তালা ভাঙতে বলেছে?”

এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য নুরুল হুদা, হাসান হাফিজ, নুরুল হাসান খানসহ ক্লাবের কয়েকজন স্থায়ী সদস্যও এর প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

 

এরপর তারা অফিস কক্ষে গিয়ে ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিকের কাছে জানতে চান, এভাবে তালা ভাঙা হচ্ছে কেন?

হৈ চৈয়ের মধ্যে কমিটির কক্ষের পাশে সাংবাদিক লাউঞ্জে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থক ফোরামের সদস্যরা স্লোগান দিতে থাকেন। তারা ‘রাজাকার-জামায়াতের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে থাকে, যা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।

এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। তখন ক্লাবের বিএনপি সমর্থক স্থায়ী সদস্যরা শফিকুর রহমানের কাছে গিয়ে দাবি জানান, বহিরাগতদের বের করে দিতে হবে।

তখন শফিকুর রহমান নিজের ফোরামের সদস্যদের নিচে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন। নতুন কমিটির সদস্য বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক নেতা আমানুল্লাহ কবীরও কমিটি কক্ষের বাইরে এসে তখন পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

বিএনপি ফোরাম থেকে ৮ জনকে বহিষ্কার

‘সমঝোতার’ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় যারা আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, সেই আট জ্যেষ্ঠ সদস্যকে বহিষ্কার করেছে প্রেস ক্লাবের বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ফোরাম।

ফোরামের ঐক্য বিনষ্টের তৎপরতার চালানোয় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান ফোরামের নেতা ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী।

বহিষ্কৃতরা হলেন- আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, গোলাম মহিউদ্দিন খান, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম কাগজী, সরদার ফরিদ ও ইলিয়াস খান।

এদের মধ্যে আমানুল্লাহ কবীর অবিভক্ত বিএফইউজের মহাসচিব হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের সমাজের নেতৃত্ব দেন। পরে একাংশের সভাপতিও হন তিনি। মনিরুল আলম প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে গঠিত হয় নতুন কমিটি

ফোরামের জ্যেষ্ঠ সদস্য এলাহী নেওয়াজ সাজু বৃহস্পতিবার কমিটি গঠনের সভায় ছিলেন। তবে নতুন কমিটিতে তিনি নেই। অন্য সাতজন নতুন কমিটির সদস্য।   

যে বৈঠকে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়, তাতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি সমর্থিত বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, সভায় সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

শওকত মাহমুদ বলেন, “এরা অতীতেও একাধিবার ফোরামের ঐক্যের বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। এবারও তারা একই কাজ করলেন। সংগঠনের ঐক্য বিনষ্ট ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন।”

তাদের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এলাহী নেওয়াজ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফোরামের কোনো গঠনতন্ত্র নেই, যার ভিত্তিতে কাউকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার কেউ রাখে।

সাংবাদিক সমাজের নেতৃত্বদাতা হিসেবে আমানুল্লাহ কবীর ও খন্দকার মনিরুল আলমের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এরাই এই ফোরামের ভিত্তির নায়ক। এদের মতো জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে বহিষ্কারের হঠকারী সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন, তারা এই ফোরামে কখন, কিভাবে এসেছেন, আমাদের অধিকাংশের কাছে তা অজানা।”

“যারা এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা অতীতে বহুবার ডিগবাজী দিয়েছেন,” বলেন এলাহী নেওয়াজ সাজু।