‘প্রেস ক্লাবের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিবৃতি এখতিয়ার বহির্ভূত’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যবস্থাপনা কমিটির দেওয়া বিবৃতি ‘অগঠনতান্ত্রিক ও এখতিয়ার বহির্ভূত’ বলে নাকচ করছে সাধারণ সভায় ভোট ছাড়া গঠিত ‘সমঝোতার’ কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2015, 03:32 PM
Updated : 30 May 2015, 11:07 AM

অপরদিকে প্রেস ক্লাবের ৪০ জন স্থায়ী সদস্য এক বিবৃতিতে গত বৃহস্পতিবার ক্লাব মিলনায়তনে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় গঠিত ওই কমিটি অবিলম্বে বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন।  

‘সমঝোতা’র কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরীর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে বিগত ব্যবস্থাপনা কমিটির দেওয়া বক্তব্য সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক, নৈতিকতা বিবর্জিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিগত কমিটি কোনো বিবৃতি প্রদান বা সভা আহ্বান কিংবা ক্লাব পরিচালনার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার এখতিয়ার রাখে না।”

এই বিবৃতির মাধ্যমে ‘বিগত কমিটির দেওয়া বিবৃতিতে প্রেস ক্লাবসহ সকলের মাঝে সৃষ্ট বিভ্রান্তি ও সংশয়’ দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় এতে।

কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, “আসুন সকলে মিলে আমরা অখণ্ডতা বজায় রেখে জাতীয় প্রেস ক্লাবকে নিরপেক্ষ মর্যাদায় একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করি। এ ব্যাপারে আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করি।”

বৃহস্পতিবার রাতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভোট ছাড়া ‘সমঝোতার মাধ্যমে’ গঠিত কমিটি অবৈধ বলে দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়, “ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবল নির্বাচনের মাধ্যমেই এক কমিটির কাছ থেকে আরেক কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রথা। এর কোনো রূপ ব্যত্যয় এবং লঙ্ঘন প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ ও দেশের সাংবাদিক সমাজ কোনোভাবে মেনে নেবে না।

“কাজেই দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার নামে যারা তথাকথিত একটি সভা করেছেন, তা গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্লাবের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থি।”

দুই বছরের বেশি সময় আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল।

নিজেদের ‘বৈধ কমিটি’ দাবি করে তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ২৭ জুন অতিরিক্ত সাধারণ সভায় ক্লাবের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন তারা।

এদিকে ‘সমঝোতার’ কমিটির বিবৃতিতে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার বৈধতার ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি কিংবা সহ-সভাপতি কেউ উপস্থিত না থাকলে স্থায়ী সদস্যদের মাঝ থেকে একজনকে সভার সভাপতি নির্বাচিত করার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সদস্য এম শাহাজান মিয়াকে সভাপতি করা হয়।

“ওই সভায় গঠতনন্ত্র অনুযায়ী ২০১৫-১৬ সালের নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচিত করা হয়। অতএব বিগত কমিটির দেওয়া বিবৃতি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও সত্যের অপলাম মাত্র।”

এতে বলা হয়, “ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য বিগত কমিটি সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূভাবে আগামী ২৭ জুন অবৈধভাবে একটি অতিরিক্ত সাধারণ সভার ঘোষণা দিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছে।”

গত ৩১ ডিসেম্বর সবুজ-আবদাল নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। তফসিল হলেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ‘পরিবেশ নেই’ বলে দায়িত্ব পালনে অপরাগতা জানালে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

ব্যবস্থাপনা কমিটি নতুন করে সাধারণ সভা ডেকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ‘অবৈধ হস্তক্ষেপের’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার ক্লাবে একটি সাধারণ সভা থেকে নতুন কমিটি গঠন করা হয়, যাতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাংবাদিক নেতারাও ছিলেন। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কেউ ছিলেন না।

নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বিএনপি সমর্থক কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে।

৪০ সদস্যের বিবৃতি

প্রেস ক্লাবের সদস্য মাহফুজুল হক খান ও নামজুল আহসান স্বাক্ষরিত ৪০ জন স্থায়ী সদস্যের বিবৃতিতে বলা হয়, “গণতান্ত্রিক ধারা উপেক্ষা করে একটি পক্ষ তাদের পছন্দমতো একটি কমিটি ঘোষণা করেছে। নিবার্চনবিহীন ও পদ ভাগাভাগির এই ব্যবস্থাপনা কমিটির নাম ঘোষণার পর থেকে প্রেস ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে অস্বস্তি ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।

“আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ক্লাবের সাধারণ সদস্যরা বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি যেমন চায় না, তেমনি ভোটবিহীন কোনো নতুন কমিটি ঘোষণার ঘোরবিরোধী। তাই আমরা অবিলম্বে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় প্রেস ক্লাবের অচলাবস্থা নিরসন ও ঘোষিত অবৈধ কমিটি অবিলম্বে অবলুপ্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতা সদস্যরা হলেন- তাহাবুর রহমান, আবদুল বাতেন, এরশাদ মজুমদার, মোস্তফা কামাল মজুমদার, মো. খলিলুর রহমান, মো. মোকাররম হোসেন, মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, আবু সালেহ, মাহফুজুল হক খান, মো. লুৎফর রহমান, নাজমুল আহসান, মাশুক চৌধুরী, আমিনুর রহমান সরকার, সৈয়দ আকরাম, সুলতান মাহমুদ বাদল, আবুল হোসেন খান মোহন, মো. মোস্তাক এলাহী বাদশা, আখতার হোসেন মাসুদ, বাছির জামাল,, মীর আহাম্মদ মীরু, তারিফ রহমান, মো. এমরান হোসেন, আলী মাহমুদ, আবদুস সেলিম, আক্তার হোসেন, আনিসুর রহমান সেলিম, আজিজুল হক, শেখ এনামুল হক, সদরুল হাসান, মো. সানাউল হক, সাহাদাত হোসেন খান, আসফার আজিজ, আসাদুজ্জামান আসাদ, এমএ বাকী, মাইন উদ্দিন আহমেদ, সানাউল হক চৌধুরী, মাশুক উল হক, ইমদাদুল হক, খুরশীদ আলম ও তানিম আজিজ খান।