মমতাকে ‘রাজি করাতে’ তিস্তা বাদ!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘তিস্তা চুক্তি না করার’ আশ্বাস দিয়েই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢাকা সফরে রাজি করিয়েছেন বলে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2015, 01:07 PM
Updated : 29 May 2015, 06:27 PM

শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা সফরে সঙ্গী হতে মোদী আগেই মমতাকে বললেও প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী ‘বেঁকে বসেন’।

সম্প্রতি কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং শিগগিরই তিস্তা চুক্তি সইয়ের আশা প্রকাশ করায় মমতার এই ‘মত বদল’ ঘটে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আনন্দবাজার লিখেছে, মমতার সফরের ব্যাপারে খোঁজ নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে ফোন করেন।

“মুখ্যসচিব তাকে বলেন, এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সফরের কোনও নিশ্চয়তা নেই। কারণ ৬-৭ জুন জেলায় কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।”

পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তিস্তা নিয়ে চুপ থাকার আশ্বাসে মমতা রাজি হন বলে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী এই বাংলা দৈনিকের দাবি। 

তথ্যের কোনো সূত্র উল্লেখ না করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “আজ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মমতাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, তিনি ঢাকায় গিয়ে তিস্তা নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। ওই চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন একমত নন, তখন শুধু বাংলাদেশের কথায় তিনি চুক্তি করবেন, এটা হতেই পারে না।

“রাজনাথও এ দিন বলেন, এই সফরেই তিস্তা চুক্তি হয়ে যাবে এমন কথা তিনি বলতে চাননি। তিনি বলতে চেয়েছিলেন, দুই দেশের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে এই চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী।”

অথচ তিন দিন আগেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, চুক্তির যে কাঠামো চার বছর আগে তৈরি হয়েছিল, তা ঠিক রেখে তিস্তা নদীর কতটুকু পানি বাংলাদেশ পাবে, তা নিয়েই মোদীর সফরে আলোচনা হবে।

“আমি এতটুকু বলতে পারি, আলোচনাটা আমরা রি-ওপেন করছি না, রি-নেগোশিয়েট করছি না। যেখানে নেগোশিয়েশন হয়েছে, সেখানেই থাকবে। আমাদের যা ন্যায় ডিমান্ড, যত পানি প্রয়োজন সেটুকু আমরা পাবই।”

এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ও শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন মমতা। তার আপত্তিতে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি আটকে যায়।

এর প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচি উপলক্ষে ঢাকা ঘুরে যান মমতা। সে সময় তিনি ‘শিগগিরই তিস্তার জট খোলার’ আশা দিয়ে যান।

তবে বৃহস্পতিবার মমতার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, “আমি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নই। কিন্তু উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে তো চুক্তি করা উচিত নয়।

“তিস্তার জলপ্রবাহ খতিয়ে দেখতে কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য।  অতীতে যে চুক্তিটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বেশ কিছু ত্রুটি আছে। সেগুলি মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন।

“আমি নিজে বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার বক্তব্য জানিয়ে এসেছি। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কোনও রকম নেতিবাচক সম্পর্ক নেই। কিন্তু আলাপ-আলোচনা না-করে একতরফা কিছু করলে আমরা সেটা কিছুতেই মানতে পারব না। কারণ আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ সবার আগে।”

স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরই নরেন্দ্র মোদীর এবারের ঢাকা সফরের মূল লক্ষ্য মন্তব্য করে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, “বস্তুত এই চুক্তি স্বাক্ষরের কর্মসূচি নিয়েই এবার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যতটা জমি হস্তান্তর হবে, তার বেশিরভাগই যাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তাই মোদী চাইছিলেন এ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মমতা তার সঙ্গে থাকুন।”

স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে পুনর্বাসনের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।