উদ্ধারকৃতদের জাতীয়তা এখনও স্পষ্ট না হলেও মিয়ানমারের দাবি, তারা ‘বাঙালি’।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার মিয়ানমারের দক্ষিণ উপকূল থেকে দেশটির নৌবাহিনী ওই নৌকা উদ্ধার করে।
এক সপ্তাহ আগে মিয়ানমার আরেকটি নৌকা থেকে প্রায় ২০০ জনকে উদ্ধারের পর তাদের বাংলাদেশি বলে দাবি করে।
মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয় উদ্ধারকৃত ৭২৭ জনের পরিচয় দিয়েছে ‘বাঙালি’ বলে, যে শব্দটি দেশটিতে নির্যাতনের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী-উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে দেশটির সরকার।
থাইল্যান্ড সরকার এই মাসে মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর পর থেকে ৩ হাজারের বেশি শরণার্থী ভিড়েছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়া উপকূলে। প্রায় ২ হাজার ৬০০ মানুষ এখনও সাগরে আটকা পড়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের সরকারের ইরাবতী বিভাগের উপ মহাপরিচালক তুন কিয়াও কিয়াও বলেন, “ওই নৌকাটিকে হিয়াঙ্গি দ্বীপের নৌঘাঁটির দিকে নিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী।”
নৌবাহিনীর সংশ্লিষ্ট ঘাটি এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন তুন। নৌকাটি যেখানে উদ্ধার করা হয়েছে, তার কাছেই অবস্থিত এই দ্বীপটিও মিয়ানমারের দক্ষিণ উপকূলের অংশ।
উদ্ধারকৃতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনের কথা জানিয়ে তুন বলেন, “ওই দ্বীপে তাদের পাঠানোর পর আমরা তাদের বিষয়ে তদন্ত করব।”
মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, খোলা ডেকের উপর শত শত মানুষ একজনের কাঁধে আরেকজন ভর দিয়ে রয়েছে। আর অস্ত্রধারী ইউনিফর্ম পরা এক কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। নৌকার কেবিনের ভেতর দেখা যাচ্ছে নারীদের জটলা।
গত সপ্তাহে উদ্ধার ২০৮ জনকে বাংলাদেশের নাগরিক বলে মিয়ানমার দাবি করে বিজিবির কাছে একটি তালিকা পাঠায়। বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের প্রধান কর্নেল মো. খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের গত ২৪ মে মিয়ানমার যাওয়ার কথা থাকলেও দেশটির পাঠানো তালিকায় বিস্তারিত পরিচয় না থাকায় তারা যাননি।
তালিকাটি ওই দিনই বিজিবির সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং উদ্ধারকৃত ২০৮ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে আরেকটি চিঠি পাঠায় বিজিবি। ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা বিজিবির কাছে পাঠায়নি।
কর্ণেল মো. খালেকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এই আলোচনার সিদ্ধান্তমতে, উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশি কেউ থাকলে তাদের দেশে ফেরত আনা হবে।
তবে এর মধ্যে রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ‘আড়াল করছে’ বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
উদ্ধার দুইশ মানুষের অধিকাংশই বাংলাদেশি এবং তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছে মিয়ানমার।
তবে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ওই নৌযানের আরোহীদের অনেকে এবং আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে ‘নৌভাসাদের’ অনেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য।
“রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্য বা নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে তাদের পালানোর বিষয়টি অস্বীকার করছে মিয়ানমার।”
এর আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, আন্দামান সাগরে বিভিন্ন নৌকা ও ট্রলারে থাকা অধিকাংশ ব্যক্তিই রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা কম।