‘সরকারের মৌলবাদবিরোধী অবস্থানের সুফল পাচ্ছে তরুণরা’

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের মৌলবাদবিরোধী অবস্থানের কারণে এদেশের যুব সমাজ সুফল পাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2015, 11:42 AM
Updated : 29 May 2015, 02:38 PM

শুক্রবার সকালে ঢাকায় ‘দক্ষিণ এশিয়ার মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম’ শীর্ষক এক সেমিনারে একথা বলেন তিনি।

সীতারাম বলেন, “মৌলবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কারণে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে সরকারকে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে বিঘ্ন ঘটে।

“সরকারকে অবশ্যই জনকল্যাণমুখী হতে হবে।কিন্তু মৌলবাদ-সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব থাকলে জনকল্যাণমুখী নীতি নেওয়া সরকারের কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারকে মৌলবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অবস্থান নিতে হবে।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘মৌলবাদবিরোধী’ অবস্থানের প্রশংসা করে ভারতের এ বামনেতা বলেন, “সরকারের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের যুব সমাজ আজ সুফল ভোগ করছে। সেই সঙ্গে মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুবসমাজকেও সচেতন থাকতে হবে।”

নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ নানা দিক দিয়ে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনেন সীতারাম।

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড অমল সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

বক্তব্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীতে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ভারতের রাজ্যসভার এ সদস্য।

তিনি বলেন, “মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিপজ্জনক উপাদান। কোনোটিকেই আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। একটা আরেকটাকে সহায়তা করে তারা। এটা মোকাবেলায় এ অঞ্চলের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”

দুটোর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক মন্তব্য করে ভারতের সিপিআই-এম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “প্রগতিশীল শক্তিকে ধুলিস্যাৎ করে দেয় মৌলবাদ-সাম্রাজ্যবাদ।”

সাম্রাজ্যবাদ বিভিন্নভাবে মৌলবাদের প্রসারের পথ তৈরি করে দেয় মন্তব্য করে এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের উদারণ টানেন সীতারাম ইয়েচুরি।

তিনি বলেন, “কখনো কখনো সেনা আক্রমণ ঘটিয়ে সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্য ঘটে। কখনো অর্থনৈতিকভাবে তাদের বিস্তার ঘটায়। এ সুযোগে মৌলবাদেরও উত্থান ঘটে।”

সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দুই দেশের ইতিবাচক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন সীতারাম।

তিনি বলেন, “গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিপিআই-এম নেতা জ্যোতি বসুর ভূমিকা ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় স্থল সীমান্ত চুক্তিতেও আমাদের দলের সম্মতি ছিল।

“এ চুক্তি নিয়ে এক সময় বিজেপি বিরোধিতা করলেও এখন তারাই বিলটি পাশ করেছে।”

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ে সিপিআই-এম’র সম্মতির ইঙ্গিত দিয়ে সীতারাম বলেন, “তিস্তা চুক্তি হলেও আমরা খুশি হব।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে ভারতের বাম নেতা এস সুধাকর রেড্ডি, শ্যামল রায়, পাকিস্তানের বাম নেতা ইমদাদ কাজী, শ্রীলঙ্কার বাম নেতা নালিন্দা জয়াতিসা বক্তব্য দেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদ ফজলে হোসেন বাদশার সঞ্চালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে নেপালে ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে এ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।