নৌকায় ধর্ষণের শিকার কর্মজীবী নারী, ২ মাঝি গ্রেপ্তার

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির এক নারী শ্রমিককে দুই দফায় পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে চারজন, যারা ওই প্রতিষ্ঠানের নৌকার মাঝি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2015, 10:42 AM
Updated : 29 May 2015, 01:25 PM

রাজধানীতে মাইক্রোবাসে কর্মজীবী গারো তরুণীকে ধর্ষণের পর সারাদেশে তুমুল আলোচনার মধ্যেই সোমবার রাতে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। 

এবারও ধর্ষণের শিকার নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়ে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের পর চারদিন পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালে না পাঠিয়ে তাকে মায়ের সঙ্গে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।  

গাজীপুরের ওই নারী বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামালা করেন। ওই দিনই প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির নৌকার দুই মাঝিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শুক্রবার আদালতে হাজির করলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিতাই চন্দ্র সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই নারী নরসিংদীর পলাশে প্রাণ-আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাজ করেন। পলাশ থেকে কোম্পানির নৌকায় করে কর্মীদের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার কাজ শেষে গাজীপুরের কালীগঞ্জের নারগানায় নিজের বাসায় ফেরার জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে নৌকায় ওঠেন ওই নারী। মাঝপথে শাওরাইত ঘাটে নৌকা থেকে অন্য শ্রমিকরা নেমে যান। এরপর নৌকাটি কালীগঞ্জের মুক্তারপুর ইউনিয়নের ফকিরবাড়ির দিকে নিয়ে যায় দুই মাঝি মুক্তারপুর গ্রামের আল-আমিন (২৫) ও ফাহিম (২৫)।

“ওই সময় আর কোনো শ্রমিক নৌকায় ছিল না। রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা দুজন নৌকায় মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।”

এরপর তারা মোবাইল ফোনে ওই কোম্পানির অপর দুই মাঝি ফারুক (২৪) ও শরীফকে (২৬) ডেকে আনে এবং ওই নারীকে তাদের হাতে দিয়ে চলে যায়।

“পরে ফারুক ও শরীফ ভোররাত পর্যন্ত ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ফকিরবাড়ি ঘাটে নামিয়ে দেয়।”

সেখান থেকে মেয়েটি ধনপুর গ্রামে বোনের বাড়ি গিয়ে বোন ও ভগ্নিপতিকে বিষয়টি জানালে তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থানায় যান এবং চার মাঝির বিরুদ্ধে মামলা করেন।  

মামলা করার পর মুক্তারপুর থেকে ফারুক ও শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে পরিদর্শক নিতাই জানান।

গাজীপুর আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড চেয়ে গ্রেপ্তারদের শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারজানা খানমের আদালতে হাজির করে।

শুনানি শেষে আদালত তাদের প্রত্যেকের জন্য ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে বলে তিনি জানান। 

তবে মামলা নিতে এবং ধর্ষণের শিকার মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিষয়ে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলা দায়ের ও আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে সময় পার হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে রোববার।”

ধর্ষিত নারী তার মায়ের সঙ্গে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে জানান ওসি।

গত ২১ মে রাতে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে কর্মরত এক গারো নারী কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাইক্রোবাসে গণধর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওই ঘটনার পর মামলা করতে সেই তরুণীকে তিন থানা ঘুরে প্রায় ১২ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়, যা নিয়ে পুলিশ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতও তিনটি রুল জারি করে।