রাজশাহীতে ছাত্রলীগের গোলাগুলি, নিহত ১

রাজশাহী সিটি কলেজে ‘আধিপত্য’ নিয়ে বিরোধের জেরে পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2015, 05:00 AM
Updated : 29 May 2015, 05:00 AM

নিহত জীবন শেখ (২৫) বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে ছাত্রদলের সভাপতি শফিকুল আলম জানান।

শহরের হেমেখাঁ কারিগরপাড়া এলাকার হোসেন শেখের ছেলে জীবনের বিরুদ্ধে থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, তিনি ‘ভাড়াটে হিসেবে’ ছাত্রলীগের ওই সংঘর্ষে যোগ দেন।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে শহরের মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুল আরিফিন রবিনের সমর্থকদের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিটি কলেজের ছাত্র আশিকুর রহমান তুহিনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।

“কলেজে আধিপত্য নিয়ে রবিন ও তুহিনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে রবিন ফোন করে তুহিনকে কলেজের সামনে ডেকে নিয়ে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।”

সন্ধ্যায় তুহিনের বাবা আতিকুর থানায় গিয়ে রবিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসেন। এ খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ রবিন সমর্থকদের নিয়ে রাত ১০টার দিকে রানীবাজার মোড়ে তুহিনের বাবার কার্যালয় ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।

সেখানে তারা তুহিনের বড় ভাই মহানগর ছাত্রলীগ কর্মী তুষারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে চলে যায়। পরে তুষারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি করা হয়।

ইফতে খায়ের আলম বলেন, “বাবার চেম্বারে হামলার খবরে রাত ১১টার দিকে তুহিন তার সমর্থকদের নিয়ে গিয়ে মালোপাড়া মোড়ে রবিন ও তার সমর্থকদের উপর হামলা চালায়। এ সময় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলি হয়।”

এসময় জীবনের গায়ে গুলি লাগলে তিনি রাস্তার পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের বাবা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারী হোসেন শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যুবদলের কর্মী হলেও ছাত্রলীগ নেতা রবিনের সঙ্গে জীবনের ঘনিষ্টতা ছিল। রবিনই সন্ধ্যায় ফোন করে জীবনকে ডেকে নিয়ে যায়।

ইফতে খায়ের আলম বলেন, “জীবন বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার পাঁচটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। রবিনের ডাকে ভাড়াটে হিসেবে জীবন ওই সংঘর্ষে অংশ নেয়।”

রাজশাহী মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জীবনের বাঁ চোখের নিচ দিয়ে গুলি ঢুকে কানের পিছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।”

হাসপাতালে ভর্তি তুষারের হাত, বুক ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার অবস্থাও ‘গুরুতর’ বলে জানান এই চিকিৎসক।

মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান রাজিবের দাবি, এ সংঘর্ষের পেছনে ‘দলীয় কারণ নেই’।

“এটি দলীয় কোনো ঘটনা নয়। রবিন ও তুহিনের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রাজিব বলেন, “তুহিনের এক বান্ধবীকে নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয় রবিন। রবিনকে গালি দিয়ে তুহিন পাল্টা স্ট্যাটাস দেয়। এর জেরে রবিন ফোন করে ডেকে নিয়ে তুহিনকে মারধর করে। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।”

বোয়ালিয়া থানার ওসি মাহামুদুর রহমান জানান, ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপি-জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশের উপর হামলা ও সংঘর্ষের সময়ও জীবন একবার গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ওই দিনই বোমা হামলায় পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার নিহত হন।

ছাত্রদলের সভাপতি শফিকুল আলম জানান, জীবন যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বয়স কম হলেও অনেক আগেই তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন।

</div>  </p>