প্রেস ক্লাবে গঠিত কমিটি অবৈধ, দাবি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির

জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভোট ছাড়া ‘সমঝোতার মাধ্যমে’ গঠিত নতুন কমিটি অবৈধ বলে দাবি করেছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2015, 04:36 PM
Updated : 28 May 2015, 04:49 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সভায় সমঝোতার মধ্যে দিয়ে কমিটি গঠনের পর রাতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এই দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়, “ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবল নির্বাচনের মাধ্যমেই এক কমিটির কাছ থেকে আরেক কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রথা। এর কোনো রূপ ব্যত্যয় এবং লঙ্ঘন প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ ও দেশের সাংবাদিক সমাজ কোনোভাবে মেনে নেবে না।

“কাজেই দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার নামে যারা তথাকথিত একটি সভা করেছেন, তা গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্লাবের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থি।”

দুই বছরের বেশি সময় আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল।

নিজেদের ‘বৈধ কমিটি’ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ২৭ জুন অতিরিক্ত সাধারণ সভায়ই ক্লাবের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন তারা।

“ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৭ জুন অতিরিক্ত সাধারণ সভার আগে অন্য কারো পক্ষে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের নৈতিক ও আইনগত কোনো এখতিয়ার ও বৈধতা নেই,” বলেন আবদাল।   

গত ৩১ ডিসেম্বর সবুজ-আবদাল নেতৃত্বাধীন এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। তফসিল হলেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ‘পরিবেশ নেই’ বলে দায়িত্ব পালনে অপরাগতা জানালে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

ব্যবস্থাপনা কমিটি নতুন করে সাধারণ সভা ডেকে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ‘অবৈধ হস্তক্ষেপের’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

এই সভায়ই হয় নতুন কমিটি

এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার ক্লাবে একটি সাধারণ সভা থেকে নতুন কমিটি গঠন করা হয়, যাতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাংবাদিক নেতারাও ছিলেন। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কেউ ছিলেন না।

নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বিএনপি সমর্থক কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে।

সবার সমঝোতায় এই কমিটি গঠিত হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ফোরামকে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতিসহ ১০টি পদ এবং জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত ফোরামকে সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ সাতটি পদ দেওয়া হয়েছে।

কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল আহমেদ (ফাইল ছবি)

এই উদ্যোগকে ‘কথিত সমঝোতা’ আখ্যায়িত করে আবদাল বলেছেন, “একই সঙ্গে তা জাতীয় গণতন্ত্র ও প্রেস ক্লাবের স্বার্থ ও ঐক্যের বিরোধী। এটা ক্লাবের অখণ্ডতা ও সাংবাদিক সমাজের বৃহত্তর ঐক্য বিনষ্ট করবে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।”

নতুন কমিটির উদ্যোক্তারা বলছেন, সাংবাদিকদের ঐক্যের স্বার্থেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন তারা এবং এতে সব পক্ষ সাড়া দিয়েছে।

সভায় বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আমানুল্লাহ কবীর বলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবকে ইউনিয়নের মতো বিভক্ত করে এর অখণ্ড ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করায় আজকের এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যদি ব্যক্তিবিশেষ এই ক্লাবের নেতৃত্ব কুক্ষিগত না করত, তাহলে এই সঙ্কট সৃষ্টি হত না বলে আমি মনে করি। আমরা সেজন্য সমঝোতার একটি প্যানেলের মাধ্যমে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই।”