সম্প্রতি বাংলাদেশের দুটি দৈনিক পত্রিকায় ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ছবি দেখে তাদের মধ্যে একজনকে নিজের ছেলে বলে শনাক্তের দাবি করেছেন সাব্বিরের মা সেলিনা আক্তার।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সাব্বিরের পরিবার থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও।
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির ৩৩ জন বন্ধুর সঙ্গে ২০১৪ সালে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়েছিলেন।
ওই বছরের ১৪ এপ্রিল সাগরে গোসলে নেমে ডুবে যান কয়েকজন। এরপর কয়েকজনকে জীবিত এবং চারজনের লাশ উদ্ধার করা গেলেও সাব্বিরের পাশাপাশি ইশতিয়াক বিন মাহমুদ উদয় নামে তার এক বন্ধুর খোঁজ মেলেনি।
এর এক বছর পর গত ১১ মে সংবাদপত্রে ছবি দেখে সাব্বিরকে তার মা শনাক্ত করেন বলে তার বড় বোন নাদিয়া হাসানের দাবি।
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ১১ মে প্রথম আলো ও কালের কণ্ঠে দুটি ছবি ছাপা হয়। সেখানে একটা ছেলে শুয়ে ছিল। সেই ছবি দেখার পর তাদের এক আত্মীয় তার মাকে ফোন করে জানায় যে ছেলেটিকে সাব্বিরের মতো লাগছে।
“মা ছবিটি দেখার পর আমার বাবাকে ফোন করে বলেছে, এটাই আমার সাব্বির,” বলেন তিনি।
ছবি দেখে কতটা নিশ্চিত হয়েছেন- জানতে চাইলে ডা. নাদিয়া বলেন, “সাব্বিরের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে হয়ত তার আগের ছবির মিল পাওয়া যাবে না। তবে আমার মা নিশ্চিত হয়েই বলেছে, এটাই সাব্বির। আমরা পুরো পরিবার আশাবাদী, আমার ভাইকে ফিরে পাব।”
ছবি দেখার পরপরই সাব্বিরের বাবা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে সাব্বিরের ছবি পাঠিয়েছেন বলে জানান নাদিয়া।
তবে এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে আহ্বান জানাব, যাতে তারা অতি দ্রুত সাব্বিরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেন।”
সাব্বিরের বাবা হাসানুর রহমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। তাদের বাসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। সাব্বির তার একমাত্র ছেলে।
কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির ফটোগ্রাফিও করতেন। মেমোরী মেকারস নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে আলোক চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজও করতেন তিনি।
দৃক গ্যালারিতে সাব্বিরের ছবির প্রদর্শনীও হয়েছিল। বিদেশে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার।
কক্সবাজার যাওয়ার আগে গত বছরের ১২ এপ্রিল সাব্বির তার ফেইসবুক পাতায় স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন, “চলে যাচ্ছি দোস্ত ! একদম নেটওয়ার্কের বাইরে !!”।
সাব্বির ডুবে যাওয়ার পর তার ওই স্ট্যাটাস সংবাদ মাধ্যমে আসার পর তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে সহানুভূতি জানিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।
মানবপাচারের শিকার হয়ে আন্দামান সাগরে ভাসমান মানুষদের নিয়ে বর্তমানে সারা বিশ্বেই আলোচনা চলছে। এই মানবপাচারের একটি অংশ কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল দিয়ে হয়।
মানবপাচারের শিকার হয়ে অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের সম্প্রতি মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া সরকার ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়।
এরপর আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া সাগরে ভাসমান এই মানুষদের উদ্ধারের সিদ্ধান্ত জানায়। অনেকে ঠাঁই পান দেশটির আচেহ প্রদেশে। তাদের ছবির মধ্যেই একজন সাব্বির বলে তার পরিবার দাবি তুলেছেন। ‘চলে যাচ্ছি দোস্ত, নেটওয়ার্কের বাইরে’