বার কাউন্সিলের নির্বাচন ১৩ অগাস্ট

আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনের জন্য ১৩ অগাস্ট দিন ঠিক করে দিয়ে তার এক মাস আগে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে বলেছে আপিল বিভাগ।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2015, 05:58 AM
Updated : 28 May 2015, 03:06 PM

বার কাউন্সিল ও তিন প্রার্থীর আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।

আদেশে বলা হয়, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে (অ্যাটর্নি জেনারেল) আহ্বায়ক ও কাউন্সিলের সচিবকে ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে তা প্রকাশ করতে হবে। আর ভোট হবে ১৩ অগাস্ট।

আদেশের পর অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

আর নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।

গত ২৫ মার্চ বার কাউন্সিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল, যাতে ভোটের দিন রাখা হয়েছিল ২০ মে। এরপর ৯ এপ্রিল ভোটার তালিকা প্রকাশ করে, যাতে ভোটার সংখ্যা দেখানো হয় ৪৮ হাজার ৪৬৫ জন।

ওই তালিকায় ‘অস্পষ্টতা ও একই নাম একাধিকবার’ থাকার কথা জানিয়ে কাউন্সিলের পাঁচ নির্বাচিত সদস্য এবং ১০১ জন আইনজীবী আলাদাভাবে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিবকে চিঠি দেন। চিঠিতে তারা তালিকা ঠিক করতে বলেন।

এরপর ১২ মে তলবি সভা করে ভোটের তারিখ পিছিয়ে ২৭ মে নতুন তারিখ রাখা হয়।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ গত ১৭ মে এ নির্বাচনের তফসিল, ভোটার তালিকা এবং ২০০৩ সালের সংশোধিত বার কাউন্সিল আইনের ৩ নম্বর ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে দুটি রিট আবেদন করেন। ২১ মে হাই কোর্ট রুলসহ নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়।

বার কাউন্সিল আইনে যে কোনো আইনজীবী তিনটি বারে (সমিতি) সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকার কথা তুলে ধরে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর এই ভোটার তালিকা হয় বিভিন্ন বার থেকে পাঠানো তালিকারি ভিত্তিতে।

“এখন একজন আইনজীবী যদি তিনটি বারের সদস্য হন, এখানকার ভোটার তালিকায় তিনবার নামটা এসে যাচ্ছে।”

সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মনে করেন, আইন সংশোধন করে একজনকে একটি বারের সদস্য থাকার  বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে। অথবা ছয় মাস আগে থেকে ভোটার তালিকার প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, “অ্যার্টনি জেনারেল তিনি বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং সচিব সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন জেলা জজ। তাদের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে। তারা যে ভোটার লিস্ট করবেন, আমরা সেই ভোটার তালিকায় নির্বাচন করতে ইচ্ছুক।”

সরকার নিযুক্ত একজন জেলা জজের তত্ত্বাবধানে করা ভোটার তালিকার উপর আস্থা রেখে তা কাউন্সিল থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

“পরবর্তী পর্যায়ে দেখা গেল, কিছুটা দ্বৈত ভোট হয়েছে। সেটা আমরা কখনও আশা করি না। নৈতিকতা বাদ দিলেও একজন আইনজীবীর দুই বারে গিয়ে, সিলেট বারে ভোট দিয়ে আবার বিমানে করে এসে ঢাকা বারে একই দিন ভোট দেবে, এটা সম্ভবপর নয়।”

খন্দকার মাহবুব বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা ভোটার তালিকা সঠিক করেছি। সংশোধন করে সেটি আমরা অনুমোদন দিয়েছি। এর মধ্যে পেছন থেকে কারা, কী ষড়যন্ত্রে অসৎ উদ্দেশ্যে রিট আবেদন করলেন?

“একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, আমরা বর্তমানে যারা বার কাউন্সিলে আছি, চল্লিশ বছর পরে বার কাউন্সিলে এসেছি।..আমরা সব সময়ই বলেছি ভোটার লিস্ট নিখুঁত হওয়া উচিত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ৫০ হাজার আইনজীবীর ভোটার তালিকার মধ্যে হয়তো দুই-একটা ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে।”

নির্বাচন আটকে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষে সচিব এবং তিন প্রার্থী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার এম বদরুদ্দোজা চেম্বার আদালতে গেলে বিচারপতি তা শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

এ ছাড়া বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে সদস্য প্রার্থী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও বার কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির দুজন সদস্য সৈয়দ রেজাউর রহমান ও এইচ আর জাহিদ আনোয়ার ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করে নির্বাচন চেয়ে আলাদা আবেদন নিয়ে যান।

গত ২৪ মে আপিল বিভাগে এসব আবেদনের ওপর শুনানি আপিল বিভাগ ২৮ মে আদেশের দিন ধার্য করে।

খন্দকার মাহবুব বলেন, কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সরকার নিযুক্ত সচিব আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে ভোটার তালিকায় ভুল-ক্রুটি সংশোধন করে দিলে কাউন্সিল তা অনুমোদন করবে। অনুমোদনের পর ১৩ অগাস্ট আইনজীবীরা ভোট দিয়ে নতুন কাউন্সিল নির্বাচিত করবে।

“কাদের ইঙ্গিতে, কাদের ষড়যন্ত্রে এই নির্বাচন পিছয়ে দেওয়া হল এবং এর পেছনে আর কী ষড়যন্ত্র ছিল, আমরা জানি না। তবে সর্বোচ্চ আদালতে যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে আমরা ক্ষুব্ধ না,” বলেন তিনি।

খন্দকার মাহবুবের অভিযোগের বিষয়ে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “যে ব্যক্তি মামলাটি করেছেন উনি পিআইএল(জনস্বার্থ আবেদন) করেন, ইউনুছ আলী আকন্দ কারও কথায় চলেন না, নিজের ইচ্ছামতোই চলেন। কাজেই তাকে দিয়ে কেউ করিয়েছে, বারের কেউ বিশ্বাস করবে না।”