রাঙ্গুনিয়ার ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত নষ্টের মামলা

এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠার পর এবার আলামত নষ্টের অভিযোগে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ধর্ষিতের মা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2015, 01:18 PM
Updated : 27 May 2015, 06:05 PM

বুধবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মীর শফিকুল ইসলামের আদালতে করা এই মামলায় ওসি হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে এসআই মজিবর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।

বাদীর আইনজীবী এরশাদুর রহমান রিটু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধর্ষণের আলামত নষ্টের পাশাপাশি কিশোরীর মায়ের দেওয়া প্রথম অভিযোগ ছিঁড়ে ফেলে কিশোরীর ১৪ বছরের ভাইকে ১৮ বছর বয়স দেখিয়ে ভুয়া মামলা করতে বাধ্য করার অভিযোগও আনা হয়েছে এজাহারে।

ধর্ষণের ঘটনায় ধামাচাপা দিতে ওই কিশোরীর ভাইকে আসামি করে জোর করে পুলিশের মামলার অভিযোগ এনে একটি রিট আবেদনে হাই কোর্ট এ নিয়ে একটি রুল দিয়েছিল।

হাই কোর্ট স্থানীয় প্রভাবশালী শাহ আলমকে আসামি করে কিশোরীর মায়ের মামলাটি নিতে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ওই আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়।

শাহ আলমকে বুধবার রাতে নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে চট্টগ্রাম জেলার (উত্তর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

এই শাহ আলমকে ‘আড়াল’ করতে গত ৯ মে স্থানীয় প্রভাবশালী ও পুলিশের ‘চাপে’ করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কিশোরীর ভাইটি এখন গাজীপুরে কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। তার জামিনের জন্য বুধবার চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ হাকিম আদালতে আবেদন করা হলেও তা নামঞ্জুর হয়েছে।

আইনজীবী এরশাদ জানান, ওসি ও এসআইয়ের বিরুদ্ধে তাদের মামলাটি গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য রেখেছে আদালত।

মামলায় বলা হয়, মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় গত ৮ মে ওই কিশোরীর মা রাঙ্গুনিয়া থানায় শাহ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এরপর রাত ৮টায় শাহ আলমকে আটক করে থানায় নিয়েছিল পুলিশ।

“পরে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ওসি হুমায়ুন কবির ও এসআই মজিবর রহমানের যোগসাজশে আসামি শাহ আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিশোরীর মায়ের কাছ থেকে কিশোরীর গর্ভপাত সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে নেওয়া হয়। শাহ আলমের বিরুদ্ধে করা অভিযোগও দুই পুলিশ সদস্য ছিঁড়ে ফেলেন।”

এরপর অন্য একটি এজাহারে ওই কিশোরীর মায়ের স্বাক্ষর নেওয়া হয় এবং কিশোরীর ১৪ বছর বয়সী ভাইকে ১৮ বছর বয়সী দেখিয়ে ওই মামলায় আসামি করা হয়, বলেন আইনজীবী এরশাদ।

ওই কিশোরীর মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসআই মজিবর রহমান আমাদের বলেছিল, এ কাগজে (এজাহার) সই করলে তোমার ছেলে-মেয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ছাড়া পাবে।

“তোমাদের ভবিষ্যত যাতে সুন্দর হয়, সব কিছু যেন আগের মতো হয়, সে দায়িত্ব আমরা নিলাম। এরপর আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে।”

আইনজীবী এরশাদ বলেন, “জ্যেষ্ঠ হাকিম কুদরত ই এলাহীর আদালতে কিশোরের জামিনের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু হাকিম আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাটিতে তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেব।”

শাহ আলমের (৫৫) বাড়ির গৃহকর্মী হিসেবে কাজের সময় তার দ্বারা ধর্ষিত হয়ে ওই কিশোরী গর্ভবতী হয়ে পড়ে বলে নতুন মামলায় বলা হয়েছে।

কিশোরীর পরিবারের দাবি, শাহ আলমের পরিবারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতি মে মাসের শুরুতে রাঙ্গুনিয়ার মরিয়ম নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভপাত ঘটানো হয়।

এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে গত ৮ মে থানায় শাহ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে যান কিশোরীর মা। তবে সেদিন শাহ আলমকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হলেও সে দিনই কিশোরীর ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঘটনাটি সংবাদপত্রে এলে তা যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া একটি রিট আবেদন করলে গত ২৫ মে হাই কোর্ট শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়।

ওই কিশোরীর মায়ের মামলা নিতে পুলিশের অস্বীকার করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং শাহ আলমসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে রুলও দেওয়া হয়।

এরপর গত সোমবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন কিশোরীর মা। ওই মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতেও রাঙ্গুনিয়া থানাকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।