রাস্তা ধস: আগেই ‘সতর্ক করেছিল’ সুন্দরবন

কারওয়ান বাজার মোড়ের কাছে রাস্তা ধসে ঝুঁকিতে পড়া সুন্দরবন হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা আগে থেকেই নির্মাণাধীন ভবন এনবিএল টুইন টাওয়ার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2015, 11:44 AM
Updated : 27 May 2015, 02:10 PM

হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ওয়াজেদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে তারা কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।

বুধবার সকালে বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক লাগোয়া সুন্দরবন হোটেল ও পাশে নির্মাণাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের এনবিএল টাওয়ার মাঝের ১৫ ফুট প্রশস্ত গলিপথ ধসে পাইলিংয়ের জন্য খোঁড়া গর্তে চলে যায়।

ওই গলিপথের একেবারে শুরু থেকে প্রায় ১২০ ফুট রাস্তার তলার মাটি বৃষ্টিতে আলগা হয়ে এই ধস নামে। সুন্দরবন হোটেলের সীমানা প্রাচীর, গলির মুখের বিদ্যুতের খুঁটি, কয়েকটি গাছ, কয়েকটি টং দোকান ও রিকশা ভ্যানও ওই গর্তে পড়ে যায়।

এই ধসের ফলে পাশের ছয় তলা সুন্দরবন হোটেল ভবনও ঝুঁকির মুখে পড়লে অতিথিসহ সবাইকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।  

হোটেলের মহা ব্যবস্থাপক ওয়াজেদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তাদের আগে থেকেই সতর্ক করে বলেছিলাম, তাদের পাইলিং ঠিকমতো হচ্ছে না। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি, তারা কাজ চালিয়ে গেছে।”

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের নকশায় কোনো সমস্যা ছিল না কিনা, তা না দেখে বলা যাবে না।

তবে বর্ষা মৌসুমে পাশে রাস্তা ও একটি উঁচু ভবন থাকায় পাইলিংয়ের সময় যে ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ ছিল তা নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।    

অবশ্য ওই নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা এম এস কনস্ট্রাকশনস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মালিক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তাদের কোনো ‘ভুল’ ছিল না।

“আমাদের কনস্ট্রাকশনে কোনো সমস্যা নেই। আমরা রাজউকের বিধি মেনেই কাজ করছিলাম। আমাদের ওয়ার্ক এরিয়ার মধ্যে কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি, সমস্যা হয়েছে একটু পাশে।”

এখন পর্যন্ত ‘যতটুকু হয়েছে’, তা ‘রিকভার করার’ চেষ্টা করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ওই এলাকার সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের  মেয়র সাঈদ খোকন ও ঢাকা উত্তরের আনিসুল হকও রাজউক ও ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ‘গাফিলতি’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ফজলে নূর তাপস বলেন, “রাজউকের দায়িত্ব রাজধানীর সকল নির্মাণ কাজ তদারক করা। এ ক্ষেত্রে রাজউক চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ চালাচ্ছে তারাও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি।”

তিনি বলে, “তারা নাকি তিন তলা বেইজমেন্ট করার প্ল্যান করেছে। কিন্তু সেজন্য যে অনুমতি দরকার তারা তা নেয়নি।... এদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও বলেন, এটা ‘সম্পূর্ণভাবে কর্তব্যে অবহেলা’।

রাস্তা ধসে পড়ায় আশেপাশের স্থাপনাগুলো ‘বড় ধরনের ঝুঁকিতে’ পড়েছে মন্তব্য করে পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপের দিকে না যায় সেজন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

মেয়র ও সাংসদ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজউকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান সেখানে উপস্থিত হলে তোপের মুখে পড়েন।

প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত রাজউকের এই সদস্য (উন্নয়ন) এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের বলেন, “রাজউকের দায়ভার থাকতে পারে, তবে যারা ভবন নির্মাণ করছিল, তাদের দায়ভারই সবচেয়ে বেশি।” 

নির্মাণ সংস্থা ‘বিধি মানেনি’ জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি মানত, তাহলে তো এ ঘটনা ঘটত না।”

অনিয়ম হয়ে থাকলে রাজউক মামলা করবে এবং তদারকিতে গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক জানান, প্রাথমিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

“আমরা একদফা আলোচনা করেছি, কীভাবে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটানো যায়...। আমাদের এক্সপার্ট দল বলেছে বালুর বস্তা দিয়ে কাঠামো তৈরি করতে। এখন সেটিই আমরা করছি।”

এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে দেখছে ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ হিসাবে।

ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল হামিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভবনটি আমাদের হলেও এটি ডেভেলপ করছিল অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। আমার যেটা মনে হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প এবং গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে হয়ত এ ধরনের একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইন্টারনাল ফ্যাক্টরই এর জন্য দায়ী।”

হোটেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ার কথা জানিয়ে মহা ব্যবস্থাপক ওয়াজেদ আলী বলেন, “এই মুহূর্তে পুরো হোটেল ফাঁকা করে ফেলা হয়েছে, যারা অতিথি ছিলেন তাদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক একটি ক্ষতিতো আছেই, পরেও হয়তো ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এখনো ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি, আমরা শিগগিরই অ্যাসেসমেন্ট করব।”

ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে বলেও ওয়াজেদ আলী জানান।