‘আকাশে হোন প্রহরী, দুর্যোগে মানুষের বন্ধু’

বিমান বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের আকাশসীমার ‘অতন্দ্র প্রহরী’ হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণের বন্ধু হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2015, 06:48 AM
Updated : 27 May 2015, 10:11 AM

বুধবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে এল-৪১০ প্রশিক্ষণ পরিবহন বিমানের অন্তর্ভুক্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পরিশ্রম, পেশাগত দক্ষতা ও সততার বিকল্প নেই। তাই সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আপনাদের প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনে মনোনিবেশ করতে হবে।”

‘জনগণের কষ্টার্জিত’ টাকায় সংগৃহ করা এই বিমানের উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিমান বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ যত্ন নেবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “সমরে আপনারা হয়ে উঠুন আকাশসীমার অতন্দ্র প্রহরী, আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণের বন্ধু।”

ঢাকায় বিমান বাহিনীর বাশার ঘাঁটিতে বুধবার এই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ বাহিনীকে আরও আধুনিক, কৌশলগত দিক দিয়ে সুদৃঢ়, শক্তিশালী ও কার্যকর একটি বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই বিমান বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণ ও এ বাহিনীর উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।”

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের ত্যাগের কথা স্মরণ করে ‘দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগকারীদের অনুগামী হিসাবে’ বিমান বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বহরে যুক্ত হওয়া এল-৪১০ পরিবহন বিমানগুলো চেক প্রজাতন্ত্রের তৈরি। এর মধ্যে দুটি বিমান বহরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, আরেকটি আগামী মাসে দেশে পৌঁছাবে।

এর আগে, পরিবহন বিমানের বৈমানিকরা প্রথমে পিটি-৬ ও টি-৩৭ বিমানে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ নিতেন, পরে নিতেন পরিবহন বিমান চালনার প্রশিক্ষণ। এতে প্রশিক্ষণ ব্যয় বেড়ে যেত। 

এল-৪১০ বিমানের অন্তর্ভুক্তির ফলে এ ব্যয় কমে আসবে। অবতরণের ক্ষেত্রে এ বিমানে বেশি সুবিধা থাকায় দুর্গম অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে।

এই বিমান অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, টহল, আকাশপথে জরিপ ও প্যারা ট্রুপিং পরিচালনার পাশাপাশি বিমান বাহিনীর সার্বিক পরিবহন সামর্থ্যকে ‘বিশ্বমানে’ পৌঁছে দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

“আমাদের রয়েছে প্রশিক্ষণের অবকাঠামোগত সুদৃঢ় ভিত্তি। মান ও দক্ষতায়ও আমরা কোনভাবে পিছিয়ে নেই। তাই আমি আপনাদের উপর পূর্ণ আস্থাশীল। কোনো রকম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া গত ২০ বছরে জাতিসংঘ মিশনে আমাদের বৈমানিকগণ প্রায় পঞ্চাশ হাজার উড্ডয়ন ঘণ্টা সম্পন্ন করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় পেশাগত অর্জন।”

প্রধানমন্ত্রী ঘাঁটি বাশারে পৌঁছালে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারী এবং ঘাঁটির অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান তাকে স্বাগত জানান।

রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ অধিনায়ক উইং কমান্ডার রাশেদ আহমেদ সিদ্দিকীর হাতে এল-৪১০ বিমানের অন্তর্ভুক্তি আদেশনামা তুলে দেন।

মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সেনা ও নৌ বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ তিন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার সংযোজনসহ বিমান বাহিনীর উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ এএন-২৪ ও এএন-২৬ পরিবহন বিমান সংযোজন করা হয়।

২০০০ সালে বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, বড় পরিসরের সি-৩১ পরিবহন বিমান সংযোজন করা হয়।

২০০৯ সালে অত্যাধুনিক এফ-৭ বি জি ওয়ান যুদ্ধ বিমান এবং ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ে বিমান বাহিনীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, “এমআই সিরিজ হেলিকপ্টার ওভারহলিংয়ের জন্য এমআরও ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমার বিশ্বাস, এ সকল স্থাপনা বিমান বাহিনীর স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।”

এর মাধ্যমে বিদেশি বিমান বাহিনীর বিমান ও হেলিকপ্টারের ওভারহলিংয়ের কাজও করা যাবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা হলে আমাদের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি নতুন খাত সৃষ্টি হবে।”

বাংলাদেশ ভবিষ্যতে জঙ্গি বিমান তৈরি করতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।  

রাশিয়া থেকে ইতোমধ্যে ৩টি এমআই-১১৭ এসএইচহেলিকপ্টার কেনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লোন প্রটোকলের আওতায় সম্প্রতি আরও পাঁচটি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টারের মধ্যে চারটির অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং একটি শিগগিরই অন্তর্ভুক্ত হবে।”

এছাড়া একটি এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টার কেনার প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি সমুদ্রে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে দুটি অগাস্ট ওয়েস্টল্যান্ড হেলিকপ্টারও বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হচ্ছে।