নারীর পোশাককে দায়ী করে স্কুলের প্রশ্নপত্র

যৌন নিপীড়নের জন্য নারীর পোশাকের দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন হয়েছে রাজধানীর খ্যাতনামা একটি স্কুলে।

হাসিবা আলী বর্ণাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2015, 02:57 PM
Updated : 26 May 2015, 03:02 PM

এ প্রশ্ন পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে এই বালিকা বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী অস্বস্তিতে ভোগার কথা জানিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির প্রথম সাময়িকীর ইসলাম ধর্ম (সৃজনশীল) পরীক্ষা হয় গত সোমবার। ৫০ নম্বরের প্রশ্নপত্রের ৫ নম্বর প্রশ্নে নারীকে অবমাননা এবং নারীর পোশাককে উদাহরণ টেনে নারীর প্রতি সহিংসতা উস্কে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

৫ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে,

“সানজিদার চালচলন, বেশভূষা ও কথাবার্তায় বেশ মার্জিত সবাই তার সাথে সদাচরণ করে। অপরপক্ষে তার সহপাঠী রুমানা আটসাঁট পোশাক পরে। তাই সে গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে প্রতিবছর বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন মেলায় অংশ গ্রহণ করে। মাঝে মধ্যে সে অনেক সমস্যায় পড়ে, তার কথাবার্তা চালচলন মার্জিত নয়। পাড়ার ছেলেরা অনেক সময় তাকে উত্যক্ত করে। এ বছর বৈশাখী মেলায় ঘটে যাওয়া বিষয় সম্পর্কে রুমানা –সানজিদাকে জানালে সানজিদা তাকে পোশাক পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়।”

 

ক. শালীনতা কী? ১

খ. রুমানা পোশাক পরিচ্ছদে শালীনতা অবলম্বন করবে কেন? ব্যাখ্যা কর। ২

গ. সানজিদাকে অনুসরণ করে আমরা কীভাবে সামাজিক অবক্ষয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি? ব্যাখ্যা কর। ৩

ঘ. সুস্থ, সুন্দর সমাজ গঠনে শালীনতার তাৎপর্য ও গুরুত্ব কুরআন- হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪

বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ছয়টি সেকশনের শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশ নেন।  আবদুল হাই ও জিন্নাত আলী নামে দুই শিক্ষক বিদ্যালয়ের মর্নিং ও ডে শিফটে ইসলাম শিক্ষার ক্লাশ নেন বলে শিক্ষার্থীরা জানান। তবে কে এই প্রশ্ন প্রণয়ন করেছেন তা জানা যায়নি।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রশ্নপত্রে এই প্রশ্ন আসার পর অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। অনেকে অস্বস্তিতে ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা যে বা যারাই করুক, কোন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে করেছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল- মানুষকে জ্ঞানের জগতে পরিচিত করানো। সেখানে নৈতিকতা বা ধর্ম শিক্ষার নামে ব্যক্তিগত উদাহরণ টেনে মেয়েদের টার্গেট করে নেতিবাচক ধারণা দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ”

তিনি বলেন, “এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখানে ছেলেদের তো উদাহরণ টেনে বলা হয়নি। টার্গেট তো মেয়েদের করা হয়েছে। ছেলেরাও তো গেঞ্জি, জিন্স পরে, মেলায় যায়। কিন্তু মেয়েদের টার্গেট করে নেতিবাচক ধারণা দেওয়া হয়েছে।

“এটি যে কোন নারীর মানবাধিকারকে অবজ্ঞা করার শামিল। শিক্ষার মাধ্যমে মানবাধিকার অবজ্ঞা করার এই শিক্ষা আমরা দিতে পারি না। সে অধিকার আমাদের নেই।

“মেয়েদের নির্যাতনের কারণ হিসেবে সামাজিক আচরণকে দায়ী না করে মেয়েদের পোশাক- পরিচ্ছদকে দায়ী করার প্রবণতা কোনো স্বাস্থ্যকর প্রবণতা নয়। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, এতে নারীর উপর নির্যাতন, নারীকে অবদমন করাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।”

গত ১৪ এপ্রিল বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারীদের উপর নিপীড়নের ঘটনা দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে এখনো আন্দোলন করছে বিভিন্ন সংগঠন। ঘটনার ফুটেজ দেখে আটজনের চিত্র প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

এরইমধ্যে রাজধানীর একটি স্কুলে এ ধরনের প্রশ্ন করা নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, “এটি একটি সেনসেটিভ বিষয়। এ ধরনের বিষয় প্রশ্নপত্রে পরিহার করাই ভালো।”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিস্টার রানী ক্যাথরিন গোমেজকে অফিসের ফোনে একাধিকবার কল করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত আছে।