ফলের বাজার এবার ‘সতর্ক’

একবছর আগে ফরমালিনবিরোধী অভিযানের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে এবার ঢাকাবাসীকে ‘সুমিষ্ট’ স্বাস্থ্যকর মৌসুমী ফলের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে চান ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি গতবছরের ক্ষতি কাটিয়ে ভালো লাভের আশাও রয়েছে।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2015, 06:01 AM
Updated : 26 May 2015, 12:16 PM

কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর ফলের আড়তগুলোয় গ্রীষ্মের ফল আসা শুরু হয়েছে মাসখানেক ধরেই। আম, লিচু, আনারস, বাঙ্গি, জাম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের দেখা মিলছে অলিগলিতেও।   

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঢাকার বাজারে দিনাজপুরের লিচু এখনও আসেনি। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা আসছে রংপুর ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে। আর আমের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সাতক্ষীরার মোহনভোগ ও গুটিসহ বিভিন্ন জাত।

গতবছর এ সময় দেশের প্রায় সব এলাকা থেকেই ফলের সরবরাহ থাকলেও অধিকাংশই ফরমালিন দেওয়া ছিল বলে অভিযোগ ওঠে।

সে সময় ফরমালিনবিরোধী অভিযানের প্রায় পুরো ঝড়টাই গেছে আমের ওপর দিয়ে। হাজার হাজার টন আম ধ্বংস করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কিন্তু ফলে ফরমালিন পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রের কার্যকারিতার বিষয়টি আদালতে গড়ালে সরকারের ফরমালিনবিরোধী কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ে। এ বছর তা নেই বললেই চলে।     

ফরমালিন শনাক্তে ব্যবহৃত যন্ত্র নিয়ে আপত্তি জানিয়ে একটি রিট আবেদনের পর গত বছর ওই যন্ত্র পরীক্ষা এবং পরে সঠিক যন্ত্র সংগ্রহের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

গতবছরের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার তাড়াহুড়ো করে ফল সংগ্রেহর পথে হাঁটছেন না ঢাকার আড়তদাররা।

সোমবার সকালে কারওয়ান বাজারের ফলের আড়তে কিরণ ট্রেডার্সে খুচরা ব্যবসায়ীদের লিচুর নিলামে কথা হয় রংপুর থেকে লিচু বিক্রি করতে আসা মোসাদ্দেক ব্যাপারীর সঙ্গে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, মানভেদে প্রতি হাজার লিচু ১৪ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

লিচুর আড়তদার আলমগীর খান বলেন, “এখন যেগুলো আসছে তা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার। তবে দিনাজপুরের লিচু, যেটার চাহিদা সবচেয়ে বেশি, সেটা আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।”

একটু ভেতরে আমের আড়তে পাকা আম পরিমাণে কম দেখা গেলেও প্রচুর কাঁচা আম রয়েছে বাজারে।বিক্রেতারা বলছেন, মূলত আচার তৈরিতে ব্যবহার হয় এসব আম, যার প্রায় পুরোটাই আসছে সাতক্ষীরার বাগানগুলো থেকে।

আড়তদার ইমাম হাসান শরীফ জানান, সাতক্ষীরার কাঁচা মোহনভোগ প্রতিকেজি ২৫-৩০ টাকা, আর গুটি আম ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাইকারি বাজারে পাকা মোহনভোগের কেজি ৫০ ও গুটি ৪০ টাকা বলে জানান তিনি।

এই ফল ব্যবসায়ী বলেন, “গতবছর ফলের কোনো ব্যবসা ছিল না, ফরমালিনের কথা বলে সব আম পুলিশ নষ্ট করে দিয়েছে। এ কারণে এ বছর আমচাষীরা একটু ভয়ে আছে। আম একটু পুরোট (পাকার উপযুক্ত) না হলে গাছ থেকে নামানো হবে না।”

এজন্যই রাজশাহীর আম আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরেক ফল ব্যবসায়ী মো. শান্ত বলেন, গত বছরের ‘তিক্ত অভিজ্ঞতার’ কারণে এবছর একটু দেরিতেই আম আসছে বাজারে।

“আগে পহেলা বৈশাখ থেকেই বাজারে আম আসত। এ বছর অনেক পরে আসছে। কারণ ব্যাবসায়ীরা ভয়ে আছেন- যদি গতবারের মতো অবস্থায় পড়তে হয়।”

শান্তর আড়তে প্রতিপাল্লা (৫ কেজি) সাতক্ষীরার হিমসাগর ৩০০ টাকা, গোপালভোগ ২৫০ আর ল্যাংড়া ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গতবছরের তুলনায় এবছর আমের দামও কিছুটা কম থাকবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী শাহজাহান খান।

তিনি বলেন, “গতবছর প্রচুর আম নষ্ট হয়েছে, অনেকেই পথে বসেছেন। এ কারণে এবছর ব্যবসায়ীরা খুব বেশি ঝুঁকি নিচ্ছেন না। অল্প লাভেই আম ছেড়ে দিচ্ছেন।”

লিচু, আম ছাড়াও পাইকারিতে বরিশালের ‘পেটি জাম’ পাল্লা প্রতি ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর খাগড়াছড়ি থেকে আসা কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।