রাঙ্গুনিয়ায় কিশোরী ধর্ষণ: ১৭ দিন পর মায়ের মামলা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশের ১৭ দিন পর মামলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2015, 01:25 PM
Updated : 25 May 2015, 01:32 PM

সোমবার চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মীর শফিকুল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে স্থানীয় শাহ আলমকে আসামি করে মামলা করেন কিশোরীর (১৩) মা।

আদালত রাঙ্গুনিয়া থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় কিশোরীর ভাইকে আসামি করে মামলা করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠার পর সোমবার একই ঘটনায় উচ্চ আদালতে করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

৯ মে ওই কিশোরীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলার পর তার ভাইকে (১৪) গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি হুমায়ুন কবির, এসআই মজিবুর রহমান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগসমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলী শাহের যোগসাজশে অভিযুক্ত শাহ আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালে বাদি পক্ষের আইনজীবী এরশাদুর রহমান রিটু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে রাঙ্গুনিয়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

“কারাগারে থাকা কিশোরীর ভাইয়ের বিষয়ে জানতে আমরা আগামীকাল আদালতের শরণাপন্ন হব। ওসি, এসআই ও চেয়ারম্যান ধর্ষককে সহযোগিতা করার বিষয়েও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

তবে ওসি ও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আইনজীবী এরশাদুর রহমান রিটু বলেন, “আদালত ঘটনার বিষয়ে শুনে বলেছেন- এরকম ঘটনা কখনো শুনিনি।

ধর্ষক প্রতিবেশী, আসামি হল ভাই

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলকের বাসিন্দা ওই কিশোরীর মা সোমবার করা মামলায় অভিযোগ করেন, আসামি শাহ আলম (৫৫) তাদের প্রতিবেশী।

“শাহ আলমের বাসায় আমার মেয়ে বিভিন্ন সময় কাজ করত (গৃহ পরিচারিকা হিসেবে)। শাহ আলম তাকে নাতনি ডাকত এবং বিভিন্ন সময় রাতে তার ঘরে রাখত।”

শাহ আলম ওই কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়।

এ ঘটনার বিষয়ে কিশোরীর মা জানতে পেরে শাহ আলম ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ঘটনা স্বীকার করেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এ মাসের শুরুতে স্থানীয় মরিয়ম নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিশোরীর গর্ভপাত ঘটানো হয়।

এ ঘটনায় ৮ মে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ওই কিশোরীর মা।

কিশোরীর মা সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগ দেওয়ার পর এসআই মুজিবুর রহমান ৮ মে রাত ৮টার দিকে শাহ আলমকে আটক করে থানায় আনে।

এজাহারে বলা হয়, ওসি হুমায়ুন কবির ও এসআই মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত শাহ আলমের পরিবারের সাথে হাত মিলিয়ে অর্থের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়। চেয়ারম্যান মো. আলী শাহর গাড়িতে করে শাহ আলমকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।

কিশোরীর মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়েকেসহ আমাকে থানায় বসিয়ে রাখে। আমার দেওয়া অভিযোগ ছিঁড়ে ফেলে পুলিশ। পরে আরেকটি অভিযোগে স্বাক্ষর নেয়।

“৯ মে ছেলে আমাদের দেখতে থানায় আসলে তাকে আটক করে। হুমকি দিয়ে ছেলে আর মেয়ের কাছ থেকে জবানবন্দি আদায় করে।”

ওই মামলায় ধর্ষণের অভিযোগে আসামি করা হয় কিশোরীর আপন ভাইকে।

এ ঘটনার বিষয়ে ওসি হুমায়ন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহ আলম বয়স্ক লোক বলে শুনেছি। তার সাথে এ ঘটনার সম্পর্ক পাইনি।

“প্রথম দিনে তদন্তে যেভাবে বাস্তবতা পেয়েছি সেভাবে মামলা হয়েছে। ওই কিশোরীর ভাইকে গ্রেপ্তার করি। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হয়তো এখন পেছনে কেউ কাজ করছে।”

আদালতের নির্দেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি হুমায়ুন বলেন, “নির্দেশের কপি পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কিশোরীর মা তার নিজের ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এখন ওই মামলার কি হবে?”

অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. আলী শাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাহ আলম আটকের দিন আমি শহরে ছিলাম। থানার আশেপাশেও যাইনি।

“ওইদিন স্থানীয়রা ফোন করে বিষয়টা আমাকে জানায়। আমি তাদের টেলিফোনেই ওসিকে বলেছিলাম দোষী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একমাত্র আমিই প্রতিবাদ করেছি।”

গাড়িতে করে শাহ আলমকে থানা থেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মো. আলী শাহ বলেন, “কেউ কি ভিডিও করে রেখেছে? রাখলে বলতে পারত। শাহ আলমকে জীবনে কখনো দেখিনি। তার বাড়িতেও কখনো যাইনি।

“আমিও একজন পিতা। আমারও মেয়ে আছে। আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল এ কাজ করছে। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে বিচার দিলাম।”