মাইক্রোবাসে তুলে ধর্ষণ: পুলিশের ফুটেজ পর্যবেক্ষণই শেষ হয়নি

রাজধানীতে মাইক্রোবাসে তুলে গারো তরুণীকে ধর্ষণে জড়িতদের চার দিনেও শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2015, 12:24 PM
Updated : 25 May 2015, 12:33 PM

ওই তরুণীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং তাতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন ভাটারা থানার পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ভাটারা থানাধীন কুড়িলে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় যমুনা ফিউচার পার্কের একটি দোকানের ওই বিক্রয়কর্মীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়েছিল একদল যুবক। দল বেঁধে ধর্ষণের পর তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

ওই তরুণী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলেও মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে তার সময় লাগছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন নিপীড়কদের দেড় মাসেও গ্রেপ্তারে পুলিশের ব্যর্থতার মধ্যে ২১ বছরের এই তরুণী ধর্ষিত হয়। আগের ঘটনাগুলোতে অপরাধী ধরা না পড়ায় অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। অপরাধীদের শনাক্তে ওই তরুণীর সহযোগিতার কথা এক দিন আগেই বলেছিলেন মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী।

তদন্তের অগ্রগতির খবর নিতে সোমবার পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, বিভিন্ন সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজের উপর নির্ভর করতে চাইছে পুলিশ।

“ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করতে অনেক সময় লাগে। কারণ এক ঘণ্টার ফুটেজ ভালোভাবে, গুরুত্ব দিয়ে দেখতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে বলে কিছুটা দেরি হচ্ছে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।

ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের শুরুতে তার কর্মস্থলে এক যুবক দুই বিদেশি নারীকে নিয়ে এসেছিলেন। মাইক্রোবাসে ওই যুবকও ছিলেন। অন্য যুবকদেরও তিনি দেখলে চিনতে পারবেন।

এই ঘটনা জানার পর পুলিশ যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন স্থানে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং কুড়িল, বিশ্বরোড ও যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন বিভিন্ন ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ শুরু করে।

পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদ বলেন, “ঘটনা ঘটার এক সপ্তাহ আগের ও ঘটনার পরের ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে মেয়েটি যে বর্ণনা করেছে তেমন কাউকে এখনও ফুটেজে দেখা যায়নি।

“এছাড়া বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজে বহু মাইক্রোবাসের চলাচলের ফুটেজ আছে। তবে কোনোটির নম্বর প্লেট ফুটেজে পাওয়া যায়নি।”

ধর্ষণকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ

ঘটনাটি পরিকল্পিত কি না, তাও এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সোমবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো ঘটনার তদন্তের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগে বলা কঠিন, এটি পরিকল্পিত ছিল কি না। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে ঘটনাটি পরিকল্পিত।”

এখনও কেউ ধরা না পড়লেও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ-র‌্যাব কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে অচিরেই সফল হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।  

ধর্ষণের এই মামলাটির অগ্রগতি তদারক করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

তবে রাতে ধর্ষণের ঘটনার পর মামলা করতে গিয়ে পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যরা।  

তার বড় বোন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের বাসা উত্তরায় হওয়ায় তারা প্রথমে মামলা করতে তুরাগ থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য এলাকার ঘটনা বলে পুলিশ রাত ৪টার দিকে তাদের ফিরিয়ে দেয়।

এরপর ভোর ৫টার দিকে তারা যান গুলশান থানায়। সেখানেও একই উত্তর মেলে। শেষে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ভাটারা থানায় গিয়ে দেখেন ওসি নেই।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওসি আসার পর মামলা নথিভুক্ত হতে দুপুর সাড়ে ১২টা বেজে যায় বলে জানান ওই তরুণীর বোন।

এদিকে গারো তরুণীকে ধর্ষণের এই ঘটনায় মামলায় দেরির কারণে পুলিশের বিরুদ্ধে সোমবার হাই কোর্ট একটি রুল দিয়েছে।

মামলা নিতে বিলম্ব কেন ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করা হবে না, অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।