সীমান্ত চুক্তির প্রটোকলে বাংলাদেশের অনুসমর্থন

ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে প্রায় চার বছর আগে সম্পাদিত স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রটোকলে অনুসমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2015, 10:53 AM
Updated : 25 May 2015, 01:30 PM

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেটোকল অনুসমর্থনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমানা নির্ধারণ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রটোকল অনুসমর্থনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

চুক্তি বাস্তবায়নে কতটুকু সময় প্রয়োজন হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এর মাধ্যমে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হল। এখন শুধুমাত্র এটি বাস্তবায়নে দুই দেশের এজেন্সিগুলো কাজ করবে, যা কর্মকর্তা পযায়ে হবে। বাস্তবে যতটুকু সময় লাগবে।

“এখন শুধু মাত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরে বাংলাদেশর সাথে একচেঞ্জ অব ইন্সট্রুমেন্ট হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রটোকল অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে ছিটমহলের ভূখণ্ড বিনিময় হবে। এতে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ছিটমহলবাসীরা এখন বাংলাদেশি নাগরিক হবেন। উল্টোদিকে ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলবাসীরা ভারতীয় নাগরিক হবেন।

তবে কেউ স্ব স্ব দেশে ফিরতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানান তিনি।

“তবে কেউ যদি ইচ্ছা করে ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকবে তাহলে সে সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের যেসব ছিঠমহল ভারতে রয়েছে সে নাগরিকরাও একই সুযোগ পাবে, ইচ্ছা করলে তারা বাংলাদেশি নাগরিক হতে পারবে। পরে চলে আসবে এখানে। নাগরিকের অভিপ্রায় এখানে প্রধান্য পাবে।”

সচিব জানান, যার জায়গা তাকে দিয়ে অপদখলীয় ভূমি সমস্যার নিস্পত্তি করা হবে। তিন বিঘা করিডোর বাংলাদেশকে স্থায়ী লিজ দেবে ভারত, যার ভেতর দিয়ে নাগরিকরা ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত করতে পারবেন।

এছাড়া অচিহ্নিত কিছু সীমান্ত এলাকা প্রটোকল অনুমোদনের মাধ্যমে তা চিহ্নিত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় স্ট্রিট ম্যাপ রয়েছে। দুই দেশ যৌথভাবে এই ম্যাপগুলো তৈরি করেছে। এরকম ৩৫টি স্ট্রিট ম্যাপ চূড়ান্ত স্বাক্ষরিত হবে প্রটোকল বাস্তবায়নের মাধ্যমে।”

ছিলমহল বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশি পেলেও অপদখলীয় জমি নিস্পত্তিতে ভারত বেশি পাবে বলে জানান তিনি।

মোশাররফ হোসাইন বলেন, “১১১টি ছিলমহল, যার আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর। জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮৬জন।

“ভারত পাবে ৫১টি ছিল মহল, আয়তন ৭ হাজার ১০১ দশমিক ০২ একর। জনসংখ্যা হচ্ছে ১৪ হাজার।”

অপদখলীয় জমির বিষয়ে তিনি বলেন, “ভারতের বেশি জায়গা আমরা দখল করে রেখেছি। ভারতের অপদখলে আছে ২ হাজার২৬৭ দশমিক ৮৮ একর। আর বাংলাদেশের অপদখলে রয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ দশমিক ১৪ একর। ৫ শত ৯ দশমিক ২৬ একর জমি ভারত পেয়ে যাবে।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে স্ট্রিট ম্যাপ স্বাক্ষরিত হবে কিনা জানেতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে এখন ‘একচেঞ্জ ইন্সট্রুমেন্টস হবে’।”

স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পর ওই বছর ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সংসদ তাতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর আগেই বঙ্গবন্ধুর সময়েই সীমানা পরিবর্তনে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩য় সংশোধনী আনায় সেটা সম্ভব হয়েছিল।

“বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকেও রেটিফিকেশনের প্রস্তাব ছিল এবং অতি সম্প্রতি ভারত তা করেছে।”

স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরে প্রণীত প্রটোকল নিয়ে আলোচনার পর ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহমোহন সিংয়ের সফরে চূড়ান্ত হলে তাতে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাক্ষর করেন বলে তিনি জানান।

“প্রটোকলটি স্বাক্ষরিত হলেও সে সময় মূল চুক্তি ভারত রেটিফাই করেনি। কাজেই এই প্রটোকলটি ইমপ্লিমেন্ট করার সুযোগ ছিল না। তখন আর এটি মন্ত্রিসভায় আনা হয়নি। এখন যেহেতু ইন্ডিয়া এটি রেটিফাই করেছে সে কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রটোকলটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয় এবং তা রেটিফাই করা হয়।”  

“এখন স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করা যাবে।”

ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

এর আওতায় বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা।

ছিটমহলে বন্দি জীবন ছিটমহলে বন্দি জীবন বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেও জমি হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ভারতের সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রটোকলে অনুসমর্থন আটকে ছিল।

৬ ও ৭ মে ভারতীয় রাজ্যসভা ও লোকসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তির জন্য আনা সংবিধানের সংশোধনী বিল পাসের মধ্য দিয়ে সেই বাধা কাটে।