পরিবহন ধর্মঘটে রেলে যাত্রীদের চাপ

দক্ষিণাঞ্চলের ১৮টি রুটে চলা পরিবহন ধর্মঘটে রেলপথে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2015, 11:24 AM
Updated : 24 May 2015, 01:08 PM

শুধু রোববারই এসব অঞ্চল থেকে ঢাকামুখী ট্রেনগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ যাত্রী পরিবহন করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

চাপ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি বৈঠকে বসছেন রেল কর্মকর্তারা।

গত ১৮ মে রাতে ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতি মামলার গ্রেপ্তার বাসটির চালক ও তার এক সহকারীর মুক্তি এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও মধুখালীর ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক আসে।

দক্ষিণাঞ্চলে চলমান ধর্মঘটের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সোমবার থেকে রাজশাহী বিভাগেও পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

ধর্মঘটের শুরু থেকেই বাস না পেয়ে যাত্রীরা রেলমুখী হতে শুরু করেন।

খুলনা থেকে যশোর হয়ে ঢাকায় প্রতিদিন দুটি করে ট্রেন চলে।

যশোর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের চিত্রা এক্সপ্রেসে যশোরের জন্য বরাদ্দ ছিল চেয়ার কোচে ৭২ ও এসি কোচে ১৪টি আসন।

“কিন্তু ট্রেনটি যখন স্টেশন ছেড়ে যায় তখন তাতে যাত্রী ছিল অন্তত ৪০০। এদের কেউ আসন পেয়েছেন কেউবা দাঁড়িয়ে রওনা হয়েছেন। অন্য যেকোন দিনের চেয়ে চাপ তিনগুণ বেশি।”

রাত ৯টার সুন্দরবন এক্সপ্রেসে যশোরের জন্য বরাদ্দ রয়েছে শোভন ১০৪টি, শোভন চেয়ার ৭০টি, বার্থ চারটি, এসি বার্থ দুটি টি এবং এসি চেয়ার ১৪টি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের যশোর প্রতিনিধি দুপুরে স্টেশনে অন্তত তিন হাজার যাত্রীকে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে দেখেছেন।

অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের সময়সূচিতেও কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান।

রেলওয়ের পশ্চিম জোনের ব্যবস্থাপক খায়রুল আলম জানান, বিভিন্ন স্টেশনে অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি লাগছে। এ জন্য সিউিউলে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।

যশোরের মতোই যাত্রীদের ভিড় দেখা গিয়েছে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনেও।

স্টেশন মাস্টার আমিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি যাত্রী যাচ্ছে। এত বেশি চাহিদা যে আমরা টিকিটও দিতে পারছি না।”

স্টেশনেই কথা হয় খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার আব্দুল খালেকের সঙ্গে। তিনি জানান, পরপর দুই দিন টিকিট করতে এসেও টিকেট পাননি তিনি।

“কিভাবে টিকিট পাবো এটাও কেউ বলতে পারছে না। ঢাকায় যাওয়া খুবই দরকার, কিন্তু এ অবস্থায় কিছু করতে পারছি না।”

দেশের বাড়িতে বেড়াতে এসে পরিবহন ধর্মঘটে আটকা পড়েছেন খুলনার সালমা খাতুন। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি।

তিনি বলেন, “দুদিনের ছুটিতে এসেছিলাম। এখন ফিরতে পারছি না।”

খুলনা প্রতিনিধি সুবীর রায় জানান, সকাল থেকেই প্রচণ্ড যাত্রীদের চাপে স্টেশনে ঢোকা যাচ্ছে না। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন টিকিট পাওয়া না গেলেও কালো বাজারে বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।  

এদিকে রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, আটকে পড়া যাত্রীদের ট্রেনে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকায় আনার চেষ্টা করবেন তারা।

মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. ফিরোজ সালাহউদ্দিন বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা রোববার বিকালে মন্ত্রণালয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসছি। যেসব যাত্রী আটকা পড়েছেন, বা যে স্থানগুলোতে যাত্রীর চাপ বেড়েছে, তাদের নিরাপদে ঢাকায় আনার বিষয়ে কথা বলব।”

প্রতিবেদনটি তৈরিরে সহযোগিতা করেছেন খুলনা, যশোর ও ঝিনাইদাহ প্রতিনিধি