দক্ষিণের বাস ধর্মঘট সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

ডাকাতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার সোহাগ পরিবহনের চালক ও সহকারীর মুক্তির দাবিতে অনড় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা দক্ষিণাঞ্চলে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিফরিদপুর, যশোর ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2015, 08:26 AM
Updated : 23 May 2015, 09:53 AM

খুলনা বিভাগের ছয় জেলা ও ফরিদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলমান অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের চতুর্থ দিন শনিবার দুপুরে যশোর বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ হুমকি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে আটক শ্রমিকদের মুক্তি ও ‘দোষী পুলিশ’ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সারা বাংলাদেশে পরিবহন ধর্মঘট শুরু করা হবে।

সম্মেলনে খুলনা বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আলী আকবার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।

এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাদেক হোসেন ও খুলনা বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক আজিজুল আলম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

পরিবহন ধর্মঘটকে শ্রমিকদের ‘যৌক্তিক আন্দোলন’ দাবি করে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতা আলী আকবার বলেন, “এ আন্দোলন থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকাসহ সব বিভাগের মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে সোমবার রাতে ডাকাতির পর যাত্রীদের অভিযোগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসটির চালক ও তার এক সহকারীকে আটক করে। পরে ডাকাতির মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তবে ডাকাতির পর চালক বাস নিয়ে মধুখালী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায় বলে দাবি করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।

এরপর আটক দুই পরিবহন শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও মধুখালীর ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ফরিদপুর থেকে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ১৮টি রুটে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক আসে।

তবে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার জামিল হাসান শুক্রবার সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাসযাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বাস চালক ও তার সহকারীকে আটক করা হলেও তাদের ছাড়িয়ে নিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করছেন।

তার এ অভিযোগের পর ধর্মঘটের চতুর্থ দিন শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকেও ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড গিয়ে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।

যশোর যেতে আকাশ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীসহ আরও কয়েকজনকে দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে দেখা যায় বাসের জন্য।

আকাশ বলেন, “ব্যবসার জন্য যশোর যেতে হবে, এভাবে ধর্মঘট চলতে থাকলে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে।”

ঝিনাইদহ বাস টার্মিনালে বাস না পেয়ে হতাশ যাত্রীরা

যানবাহন না চলায় যাত্রীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি বেকায়দায় পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরাও।

বাসস্ট্যান্ডের সুবর্ণ পরিবহনের কাউন্টার গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন শ্রমিক বসে আছেন। ধর্মঘটের কারণে চারদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানান এসব শ্রমিক।

হাবিব মোল্লা নামে এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, “আমরা দিন আনি দিন খাই। এভাবে চলতে থাকলে শুধু যাত্রীরাই সমস্যায় পড়বে না, শ্রমিকরাও সমস্যায় থাকবে।”

এর মধ্যে শনিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা থেকে কুষ্টিয়া ও যমুনা সেতু হয়ে ঢাকাগামী বেশকিছু বাস ছেড়ে দেখা গেছে বলে শ্যামলী পরিবহনের টিকেট কাউন্টার থেকে হিল্লোল হোসেন জানিয়েছেন।

এছাড়া ঝিনাইদহের অন্য কোনো স্থান থেকে কোন ধরনের দূরপাল্লার যানবাহন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি।

ঝিনাইদহ বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি উজ্জল বিশ্বাস বলেন, খুলনা বিভাগীয় নেতারা বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, তারা তার সমর্থন দিয়েছেন।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট মেনে চলবেন জানালেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ের দ্রুত সমাধান আশা করছেন যাত্রী ও শ্রমিকদের অধিকাংশই।