ব্লগার হত্যার বিচার দাবি রুশদীসহ ১৭৮ লেখকের

বাংলাদেশে তিন মাসে তিনজন ব্লগার হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদী, নরওয়ের ইয়স্তেন গার্ডার ও কানাডার মার্গারেট এটউডসহ বিভিন্ন দেশের ১৭৮ জন সাহিত্যিক। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2015, 01:55 PM
Updated : 22 May 2015, 04:43 PM

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে লেখকদের আন্তর্জাতিক সংঘ পেন ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়। 

চিঠিতে তারা অবিলম্বে ব্লগারদের হত্যাকারীদের ধরে বিচারের ব্যবস্থা করা এবং বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

মুক্তমনা ব্লগের পরিচালক লেখক অভিজিৎ রায়, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে রাজপথে নির্মমভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “আমরা প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদ ও তার সরকারকে এ বিষয়ে তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের দাবি জানাচ্ছি, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এবং খুনিচক্রকে বিচারের আওতায় আনা হয়। ”

ম্যানবুকারজয়ী লেখক ইয়ান মার্টেল, ভারতের অমিতাভ ঘোষ, আয়ারল্যান্ডের কোলম টবিন, পেন ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি জন রালস্টন সাউল এবং বাংলাদেশ পেনের সদস্য খাদেমুল ইসলামও সই করেছেন এই চিঠিতে।

গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে কাজে যাওয়ার পথে একদল মুখোশধারীর ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হন ৩২ বছর বয়সী ব্লগার ও লেখক অনন্ত।

“হত্যার শিকার হওয়ার আগে তিনি একাধিকবার ইসলামী উগ্রবাদীদের হুমকি পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের ইসলামবিরোধী ও ধর্ম অবমাননাকারী আখ্যায়িত করে তাদের হত্যার জন্য জঙ্গিদের তৈরি দুটি তালিকা বাংলাদেশি গণমাধ্যমে এসেছে, যাতে অনন্ত বিজয় দাশের নামও ছিল।”  

এর মাত্র আড়াই মাস আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনন্ত দাসের বন্ধু ও সহব্লগার অভিজিৎ রায়কে একই কায়দায় হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ওই হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও আহত হন।

“একটি ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে শোনা যাচ্ছে,” বলা হয় লেখক সংঘের চিঠিতে।  

অভিজিৎ খুন হওয়ার একমাসের মাথায় গত ২৯ মার্চ ঢাকার বেগুনবাড়িতে নিজের বাসা থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আরেক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু।  ওই ঘটনায় দুই মাদ্রাসাছাত্রকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

“পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা ২৭ বছর বয়সী এই ব্লগারকে নিশানা করেছিল, কারণ তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লেখালেখিতে ইসলামের অবমাননা করেছেন বলে তাদের বিশ্বাস।” 

২০১৩ সালের পর বাংলাদেশে আরও অন্তত তিনজন লেখকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হলেও কারও বিচার শুরু হয়নি।

পেন ইন্টারন্যাশনালের চিঠিতে বলা হয়, “যে লেখক ও সাংবাদিকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মত প্রকাশ করছেন, তাদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বাড়তে থাকায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার।”

এসব হামলা ও হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন চিঠিতে স্বাক্ষরকারী লেখকরা। 

এতে বলা হয়, “হুমকির মুখে থাকা অন্য ব্লগার ও লেখকদের নিরাপত্তায় সরকার তাদের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে বলে আমরা আশা করি।”

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আরও আছেন ট্রুইজেন্স এলিড, মার্গারেট এটউড, মিশেল অগাস্টিন, ড. হান্নান আওয়াদ, শ্রাবনী বসু, নাজমি বারি, এলিজাবেথ এবেনড্রোথ, বারবারা ব্রোনেন, ১০. উর্বশী বুটালিয়া, সুদীপ চক্রবর্তী, অ্যান ক্লার্ক, জেনিফার ক্লেমেন্ট, স্বপন দাশগুপ্ত, ফয়সাল দেবজি, ফাহিম ফার্সি, ঋষি মজুমদার ও জিম এইটকান।

গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়ান মার্টেল বলেছেন, “বাংলাদেশে ব্লগারদের হত্যার ঘটনা এমন ভয়ংকর ধরণের অপরাধ যে এ ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে কিছু একটা করতেই হবে।”

ইয়ান মার্টেল বলেন, কোন পশ্চিমা দেশের সরকারের চাইতে তাদের এই চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অনেক বেশি প্রভাবিত করা যাবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ অন্য দেশের সরকারের তরফ থেকে এধরণের আবেদন, নিবেদন বা চিঠিকে রাজনীতিকরা আর খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। সে তুলনায় তাদের চিঠি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনেক বেশি বিক্ষুব্ধ করবে বলে মনে করেন তিনি।