ফরিদপুরের মধুখালীতে বেনাপোলগামী সোহাগ পরিবহনের একটি নৈশকোচে সোমবার রাতে ডাকাতির পর যাত্রীদের অভিযোগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসটির চালক ও তার এক সহকারীকে আটক করে। পরে ডাকাতির মামলা করে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তবে ডাকাতির পর চালক বাস নিয়ে মধুখালী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠায় বলে দাবি করেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
এরপর আটক দুই পরিবহন শ্রমিকের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ও মধুখালীর ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাকা দেন তারা।
ধর্মঘটের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে রাজধানীর ঢাকার পথে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। এসব জেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পথেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, বেনাপোল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার অন্তত ১০টি পথে বাস চলাচল করে। অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে ভারত ফেরত এসব রুটের কয়েকশ পাসপোর্টযাত্রী বেনাপোল থেকে গন্তব্যে যেতে পারছেন না।
বুধবার সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস বেনাপোল না ছাড়ায় বিভিন্ন বাস কাউন্টার ও আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন ভারত ফেরত যাত্রীরা। অভ্যন্তরীণ পথেও বাস চলাচল না করায় অনেকেই প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে অথবা কমিউটার ট্রেন ধরে রেলপথে গন্তব্যে যাত্রা করছেন।
শুক্রবার দুপুরের দিকে বেনাপোলের ঈগল পরিবহনের বিশ্রামাগারে ভারত ফেরত তরুণ কুমার বিশ্বাস, শেখ আবু জামাল, সাইদুজ্জামান ও তার স্ত্রী রাফিজাজ্জামান এবং হরিশচন্দ্র পাল নামে ঢাকাগামী কয়েকজনকে দেখা যায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তারা বলেন, দুদিন আগে থেকে ডাকা ধর্মঘটের খবর জানা থাকলেও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর ঢাকাগামী যানবাহন না ছাড়ায় পরিবার নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন।
এছাড়া সকালে ভারত থেকে দেশে ফিরে স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকার বকশীবাজার এলাকার নকুল সাহা এবং মাদারীপুরের নাজির আহম্মেদ ও সাখাওয়াত হোসেন একই কারণে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। তারা অবস্থান নিয়েছেন বেনাপোলে চেকপোস্টের খাজাবাবা সুপার মার্কেটের একটি মানিচেঞ্জার কাউন্টারে।
নকুল সাহার ছেলে উৎস সাহা ঢাকার উদয়ন স্কুলে ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। উৎস বলেন, “রোববার থেকে আমার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভারত সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেও বাস বন্ধ থাকায় বাড়ি যেতে পারছি না।”
এদিকে দুই পরিবহন শ্রমিককে ‘বিনা দোষে’ আটক করা হয়েছে দাবি করে তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানান যশোর জেলা বাস-মিনিবাস, ট্রাক-লরি মালিক শ্রমিক সমম্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপুড়িয়া।
বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতি যশোরের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমরা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দাবি না মানায় খুলনা বিভাগের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।”
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, জেলার সবগুলো বাস টার্মিনাল থেকে এবং জেলার উপর দিয়ে চলাচলকারী ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাস এবং অভ্যন্তরীণ রুটের সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে তৃতীয় দিনেও কমেনি যাত্রীদুর্ভোগ।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাবিবুর রহমান হবু বলেন, “গ্রেপ্তার পরিবহন শ্রমিকদের মুক্তিসহ আগামীকালের মধ্যে দাবি না মানলে জেলা থেকে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হবে।”