আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ইসির ক্ষোভ

মাগুরা উপ-নির্বাচন নিয়ে সভায় গত মাসে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ক্ষোভ ঝাড়ল নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2015, 06:26 PM
Updated : 21 May 2015, 06:26 PM

বৃহস্পতিবার ওই সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ ও নির্বাচন কমিশনাররা ব্যাপক ক্ষোভ ঝাড়েন বলে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন জানিয়েছেন।

একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিশনের দুজন সদস্য বলেছেন- কয়েকটি কেন্দ্রে যা হয়েছে তাতে ইসি শুধু বিব্রত নয়, লজ্জায় পড়েছে। আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে।”

২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোটের দিন অনিয়ম ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় তিনটি কেন্দ্রের (সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমলাপুর শেরেবাংলা রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় এবং জুরাইন আশ্রাফ মাস্টার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়) ভোট বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আরো অনেক কেন্দ্রে গোলযোগের ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও সাময়িক ভোট বন্ধ রেখে পরে চালু করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ইসির সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সভা হয়। এরমধ্যে প্রথম ঘণ্টা মাগুরা-১ উপ-নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।পরের সময়টুকুতে তিন সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা।

নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হ্যাঁ, সিটি নির্বাচন নিয়েও তো আমরা অনেক কথাই তো বলেছি। যা যা বলা দরকার বলেছি।”

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভোটে বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন বলে কর্মকর্তারা জানান।

বৈঠকে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পুলিশের কাছে অস্ত্র থাকে ঝুলিয়ে রাখার জন্য? আপনাদের সামনে ব্যালটে সিল মারা হয়। আপনারা গুলি করে উড়িয়ে দিলেন না কেন?”

বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণের সুরিটোলা কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, “যেভাবে সিলমারা হয়েছে তাতে নিরাপত্তারক্ষীরা নিষ্ক্রিয় ছিল। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমারা শুধু ব্ব্রিত নই, লজ্জায় পড়েছি। আমরা বাহিনীর সদস্যদের সৌজন্য করে বলি-তারা ইসিকে সহযোগিতা করবে; কিন্তু এটা তো তাদের দায়িত্ব।”

জাল ভোট দেওয়ার এই ছবি ঢাকা দক্ষিণের কবি নজরুল কলেজ কেন্দ্রের

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে থেকে ঠিকমত তথ্য পাননি বলে অভিযোগ করেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য কোনো জবাব দেননি।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য বলেন, “যখনই কোনো বিষয় তারা অবহিত হয়েছেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে সম্প্রতি টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন, “এ নির্বাচনকে ভালো বলা যাবে না। ইসির যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ভালো নির্বাচন করা যায়নি।”

এর আগে উপজেলা নির্বাচনে অনিয়মের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের দুষেছিল কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী জানান, আসন্ন মাগুরা-১ উপ-নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও টহল বেশি থাকবে। সেই সঙ্গে তারা কী ভূমিকা নেয় তার উপরও কমিশন নজর রাখবে।এ উপনির্বাচনের বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পুলিশের অতিরিক্ত মহা পরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সেই সঙ্গে মাগুরা-১ আসনে উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, খুলনা বিভাগীয় কমিশার, মাগুরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট ২০ জনের বেশি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।