হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন না জাফর ইকবাল

আগেও অনেকবার হত্যার হুমকি পেয়েছেন জানিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টাসহ অন্য নয়জনের সঙ্গে তাকেও চিঠি পাঠিয়ে যে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাতে বিচলিত নন তিনি।

জাবেদ ইকবাল, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2015, 01:35 PM
Updated : 21 May 2015, 01:35 PM

উপরন্তু এবার হুমকি পাওয়াদের তালিকায় ‘বড় মানুষেরা’ থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হয়ে হুমকিদাতাদের খুঁজে বের করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক বুধবার একটি চিঠি পান, যাতে ‘আল কায়েদা আনসারুল্লাহ বাংলাটিম:১৩’র নামে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

ডাকযোগে আসা ওই চিঠিতে ‘টার্গেট’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, কাবেরী গায়েন, গণজাগরণের ইমরান এইচ সরকার ও তারানা হালিমসহ ১০ জনের একটি তালিকা রয়েছে।

ওই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা সবাই ‘প্রতিষ্ঠিত’ এবং নিরাপত্তার আওতায় থাকায় রাস্তা-ঘাটে তাদের উপর হামলার আশঙ্কা ততোটা নেই বলে মনে করেন জাফর ইকবাল।

তবে গত তিন মাসে যে তিনজন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের যারা সঙ্গী-সাথী রয়েছেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তি দিয়ে কথা বলেন, তাদের নিরাপত্তার দিকটি দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “হত্যার হুমকি আমার জন্য নতুন কিছু না, তাই এতে আমি ভীত নই।

“আমি অসংখ্যবার এই রকম চিঠি পেয়েছি, অনেকবার হয়েছে আমি কাউকে বলিনি, এমনকি আমার স্ত্রীকেও না।”

বুধবার পাওয়া ওই চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, “এই বার হত্যার হুমকি দিয়ে যে চিঠিটা দেওয়া হয়েছে তার বানানও শুদ্ধ না। অনেক কষ্টে আমি চিঠির ভাষা বুঝতে পেরেছি।

“এই বার হত্যার হুমকির তালিকায় বড় বড় মানুষেরা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন করে বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের খুঁজে বের করবে।”

তিনি বলেন, “এখানে যাদের নাম দিয়েছে তারা সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষ। তাদের ঝুঁকি নাই। কারণ তারা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পায়। আমারও গত সাতদিন ধরে পুলিশ পাহারা রয়েছে। এদের রাস্তার মোড়ে চাপাতি দিয়ে মারতে পারবে-এই আশঙ্কা আমি দেখি না।”

নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় থাকা ব্লগারদের বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা বিজ্ঞানের কথা বলে, যুক্তির কথা বলে এখন তাদের নামের সাথে নাস্তিক জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।

“অনন্তের মত তরুণ ছেলেরা যারা প্রকৃতপক্ষে ঝুঁকিতে আছে তাদের জন্য কিছু করা দরকার। তাদের মার্ডার করার পরে অন্যদের ফোনে হুমকিও দিচ্ছে।”

সপ্তাহ খানেক আগেই সিলেটে দিনের বেলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে, যিনি মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।

গত ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মুক্তমনা ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে। হামলায় আহত হয়েছিলেন তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যা।

এই দুই হত্যাকাণ্ডের মাঝে ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজের বাসার কাছে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন আরেক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু।

গত ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে ওয়াশিকুরকে হত্যার পর জনতা দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে ধরে পুলিশে দিয়েছিল। তারা নিজেদের উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীর অনুসারী বলে স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ব্লগারদের হত্যায় উগ্রপন্থিদের সংশ্লিষ্টতার দিকে ইঙ্গিত করে এলেও এখনো কোনো ঘটনার সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার হননি কেউ।

এ নিয়ে দৃশ্যত অসন্তোষ উঠে এসেছে অধ্যাপক জাফর ইকবালের কথায়।

“ধরেই নেওয়া হয়েছে, যারা ব্লগার তাদের নামের সাথে নাস্তিক কথাটা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মারা হবে, বিষয়টা আমার জন্য অনেক কষ্টের। তাদের কেউ নিরাপত্তা দেয় না, সরকারও তাদের জন্য কিছু করে না। এতে আমি বিচলিত,” বলেন তিনি।

ব্লগারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “হেফাজতে ইসলামের হাত থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল তার থেকে গত তিন মাসে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। যাকে মারবে বলে ঠিক করে তার নামের পাশে নাস্তিক ও পরে ব্লগার জুড়ে দেয়।

“এদের মারার পরে পুলিশও এমন একটা ভাব করে যাতে নিজের দোষে তাদের মারা হয়েছে। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। কারো লেখা যদি অন্যের পছন্দ না হয় তাহলে লিখে তার প্রতিবাদ করতে পারে। কারো লেখা যদি দেশের আইনের পরিপন্থি  হয় তাহলে প্রচলিত আইনে তার বিচার করা উচিত।”

ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এই লেখক বলেন, “আমাদের বাংলাদেশে আগে কোমল একটা ধর্ম ছিল। এখন সেই ধর্মকে একটা বিচিত্র ধর্মে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে কোনো মায়া-মমতা ভালবাসা নাই। ওকে মারো, ওকে জবাই করো- এভাবে একটা ধর্মকে নিষ্ঠুর ধর্মে পরিণত করা হচ্ছে।”

ভীত নন ঢাবি ভিসিও

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, জঙ্গি গোষ্ঠীর হত্যার হুমকিতে ভীত নন তিনি।

বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জঙ্গি গোষ্ঠীকে আমি ভয় পাই না, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

“তবে শত্রুরা যে তাদের কার্যক্রম থামায়নি, এটা আবার প্রমাণ করেছে। তাদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”