ব্লগার অনন্ত খুনের দায় স্বীকার আল কায়েদার

সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে খুনের পর আনসার বাংলা ৮ নামে একটি টুইটার একাউন্ট থেকে বলা হয়েছে, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

মঞ্জুর আহমদ সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2015, 12:14 PM
Updated : 12 May 2015, 01:03 PM

আড়াই মাস আগে ঢাকায় অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে কিছু দিন আগে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখার সংশ্লিষ্টতার দাবি করা হয়েছিল, তবে এই সংগঠনটির তৎপরতার বিষয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে তেমন তথ্য নেই।

অভিজিৎ ছিলেন মুক্তমনা ব্লগসাইটের পরিচালক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র অনন্তও এই ব্লগে নিয়মিত লিখতেন। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেও সোচ্চার ছিলেন তিনি।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের দেড় মাসের মধ্যে ঢাকায় দিনের বেলায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে।

একই কায়দায় মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় হত্যা করা হয় বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা অনন্তকে।    

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে চিহ্নিত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের এক ঘণ্টার পরই সকাল ১০টা ২৬ মিনিটে আনসার বাংলা ৮ একটি টুইটে বলে, “আল্লাহু আকবার!!! বাংলাদেশে আরও একজনকে হত্যা করা হয়েছে। শিগগিরই আমাদের অপারেশন টিমের কাছ থেকে খবরটি নিশ্চিত করব আমরা।”

এর এক ঘণ্টা পর আরেকটি টুইটে বলা হয়, “আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ভাইয়েরা ১০০% নিরাপদ।”

এরপর পৌনে ১২টায় আরেকটি টুইটে বলা হয়, “আল কায়েদা ইন ইনডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট সিলেটে অনন্ত বিজয় হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করেছে।”

পরের টুইটগুলোতে আনসার বাংলা ৮ এর নাম ব্যবহার না করে এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকারকারী হিসেবে একিউআইএসের নাম বলার জন্য সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলা হয়।

অভিজিৎ ও ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশি তদন্তের মধ্যে গত ৫ মে এই পেইজে এক টুইটে পরবর্তী লক্ষ্যে হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।  

বাংলাদেশে এর আগে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পেছনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আসে। গোয়েন্দাদের ধারণা, আল কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী।

গত ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে ওয়াশিকুরকে হত্যার পর জনতা দুই মাদ্রাসা ছাত্রকে ধরে পুলিশে দিয়েছিল। তারা নিজেদের জসীমউদ্দীনের অনুসারী হিসেবে স্বীকার করেন বলে পুলিশ জানায়।

আনসার বাংলা ৮ এর টুইটার পেইজে অভিজিৎ, ওয়াশিকুর ও রাজীবের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম শফিউল আলম লিলনকে ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বাড়ির কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয় লালনভক্ত লিলনকে। তখন আনসার আল ইসলাম ৭ নামে এই টুইটার পেইজ থেকে ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বার্তা এসেছিল।

অনন্ত খুনের দায় আল কায়েদার স্বীকার করা প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। ফলে এটাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”

সেইসঙ্গে অন্য সব বিষয়ে মাথায় রেখে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান কমিশনার।