কর্তৃপক্ষ ছুটি না দেওয়ায় ওই নারী কারখানার টয়লেটে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে সংবাদপত্রে খবর দেখে রোববার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই নির্দেশ দেয়।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই প্রতিবেদন দিতে বলে ২৪ মে এই বিষয়ে শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছে আদালত।
কালিয়াকৈরের হরিণহাটি এলাকায় অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ ও কারখানার লাস্টিং সেকশনের সুপারভাইজার মো. রতন মিয়াকে তলব করেছেন আদালত।
তিনজনকেই ওই ঘটনার বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা নিয়ে আগামী ২৪ মে হাজির হতে দিতে নির্দেশ এসেছে বলে ওই আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ছুটি না পেয়ে শনিবার কারখানার টয়লেটের ভেতরে সন্তান প্রসব করেছেন এক নারী শ্রমিক। প্রসবের পর মাকে বাঁচানো গেলেও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
ওই কারখানার লাস্টিং সেকশনে কাজ করেন হামিদা আক্তার। তিনি অন্তঃসত্ত্বা থাকায় লাস্টিং সেকশনের সুপারভাইজার রতন মিয়ার কাছে ছুটির আবেদন করলেও ছুটি পাননি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এদিকে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছুটি না দেওয়ার অভিযোগটি তদন্ত করে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার কারখানা কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কারখানার ডিজিএম (প্রোডাকশন) ফজলুল বাকীকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডিজিএম (প্ল্যানিং) হারুন অর রশিদ ও এজিএম (এইচআর) মিরাজুল করিম।
আজিজ দাবি করেন, তাদের কারখানায় কোনো নারী শ্রমিক গর্ভবতী হলে তার নিয়মিত চিকিৎসার জন্য কারখানার হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে তার নাম তালিকাভুক্তির নিয়ম থাকলেও হামিদা তা করেননি।
তিনি জানান, চার বছর ধরে চাকরিরত হামিদা গত বছরের ২১ এপ্রিল মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন। পুত্র সন্তান হওয়ার পর ছুটি শেষে গত সেপ্টেম্বর তিনি আবার কাজে যোগ দেন।
“হামিদা এবার গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি চেপে রেখেছিলেন। ওই দিন লাস্টিং সেকশনের সুপারভাইজার রতন মিয়ার কাছে পেট ব্যথার কথা বলেছিল সে। তখন তিনি হামিদাকে কারখানার চিকিৎসকের নিকট পাঠান। তিনি ছুটি চাননি।”
কারখানার চিকিৎসক মাহমুদুর রহমান দুলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি (হামিদা) গর্ভবতী ছিলেন, তা কাউকে বলেননি। ব্যথার ওষুধ নিয়ে তিনি ফ্লোরে তার কাজে যোগ দিতে ফিরে গিয়েছিলেন।
“দুপুরে টয়লেটে তার অপরিণত (আনুমানিক ১৬ সপ্তাহ বয়সী) বাচ্চার অ্যাবোরশন হয়। অ্যাবোরশনের পর তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সেজন্য তাকে স্থানীয় খাজা বদরুদ্দোজা মডার্ন ক্লিনিকে পাঠানো হয়।”
জরায়ু পরিষ্কারের পর হামিদাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে খাজা বদরুদ্দোজা মডার্ন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক আব্দুল মজিদ জানান।
এই নারীর সঙ্গে কথা বলে কালিয়াকৈর থানার এসআই মো. মাসুদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১০ মাসের ব্যবধানে পুনরায় গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি হামিদা নিজেই বুঝতে পারেননি।”
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার হামিদা স্বামী বাদল মিয়া ও শ্বশুড়-শাশুড়ির সঙ্গে কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন।