নাশকতার মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

অবরোধের মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 01:49 PM
Updated : 7 May 2015, 12:54 PM

গত ৫ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন মাসে নাশকতার বেশ কয়েকটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে হুকুমের আসামি করা হয়, যার মধ্যে বুধবার প্রথম অভিযোগপত্র জমা দিল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সন্ধ্যায় ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ডিবির এসআই বশির উদ্দিন এই অভিযোগপত্র দেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আদালতে পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই উজির আলী।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির আরও ৩৭ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন এম কে আনোয়ার, রুহুল কবির রিজভী, আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, খন্দকার মাহবুব হোসেন, হাবিবুন নবী খান সোহেল, শওকত মাহমুদ, মারুফ কামাল খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

আসামিদের মধ্যে ৩১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আদালতের আদেশ চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা বশির। বাকি সাতজন গ্রেপ্তার রয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তিনি।

হত্যাসহ দণ্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারা এবং বিস্ফোরক আইনে দুই মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তা বশির।

অভিযোগপত্র পাওয়ার পর আদালত অভিযোগ গঠনের শুনানি নেবে, তাতে সন্তুষ্ট হলে বিচার শুরুর আদেশ হবে। যদি তা হয়, তবে দুর্নীতি মামলায় বিচারের সম্মুখীন খালেদা জিয়াকে নাশকতার মামলায়ও আদালতে দাঁড়াতে হবে।

এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়াকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে তার নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি।

গুলশানে নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে গত ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু হয়।

এর মধ্যেই ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর কাঠের পুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে অগ্নিদগ্ধ ও আহত হন ৩০ জন। এর মধ্যে নূর আলম নামে এক ঠিকাদার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নূর আলমের স্বজনদের আহাজারি (গত ১ ফেব্রুয়ারির ছবি)

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার পেচান গ্রামের বাসিন্দা দুই সন্তানের জনক নূর আলম ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। তার দেহের ৪৮ শতাংশ পুড়েছিল।

এরপর ৬৯ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেন যাত্রাবাড়ী থানার এসআই কে এম নুরুজ্জামান, যাতে অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি চেয়ারপারসনকে করা হয় হুকুমের আসামি।

এজাহারে বলা হয়, “খালেদা জিয়া দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দেন এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশে অচলাবস্থা নিশ্চিত করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। তার ওই নির্দেশেই আসামিরা বাসে নাশকতা ঘটায়।”

মামলায় আসামি করা হলেও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া ও সেলিমা রহমানকে বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

এই মামলায় গ্রেপ্তার সোহাগ ও লিটন নামে দুজনের হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কারা কারা জড়িত, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে ওই দুই আসামি।

অবরোধ এবং সেই সঙ্গে বিএনপি জোটের হরতালে তিন মাসে নাশকতা ও সহিংসতায় দেড়শ’ জনের মৃত্যু হয়, যার অর্ধেকের বেশি মারা যান গাড়িতে অগ্নিসংযোগ কিংবা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের কারণে।

তখন বেশ কয়েকটি মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীর মামলার তদন্তই সবার আগে শেষ হল।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবর।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- গ্যাটকো, নাইকো, বড়পুকুরিয়া, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা।

এর মধ্যে নিম্ন আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে। অন্য তিনটি মামলার বিচার হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।