‘জঙ্গি তহবিল গঠনে’ আশুলিয়ায় ব্যাংকে ডাকাতি

আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির পেছনে জঙ্গি তহবিল গঠনই উদ্দেশ্য ছিল বলে পুলিশ দাবি করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2015, 01:04 PM
Updated : 6 May 2015, 05:14 AM

এই ডাকাতিতে জড়িত অভিযোগে সোমবার মানিকগঞ্জ থেকে জসিম উদ্দিন আসাদ (২২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক একথা বলেন।

নিজেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য স্বীকার করে জসিম সাংবাদিকদের বলেছেন, জঙ্গি অর্থায়নে তহবিল গঠনের জন্য ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন তারা।

১৪ দিন আগে ডাকাতির সময় এই জসিমই কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখার ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহসহ দুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

জসিমকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

জসিমের শ্বশুরবাড়ি আশুলিয়া। দৌলতপুরে তার ফুপুশাশুড়ির বাসা। ডাকাতির পর থেকে জসিম সেখানেই পালিয়ে ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, “জসিম ডাকাতির দিন ব্যাংক ম্যানেজারকে বুকে ছুরি মেরে হত্যা করে। এরপর পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে এক বৃদ্ধ জড়িয়ে ধরলে তার বুকেও ছুরিকাঘাত করে সে।”

গত ২১ এপ্রিল দুপুরে কমার্স ব্যাংকের ওই শাখায় হানা দেয় ডাকাত দল। সেদিন খুন করা হয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহসহ সাতজনকে, আহত একজন পরে মারা যান।

জসিমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ডিআইজি ফারুক বলেন, পালানোর সময় নিজের দলের লোকদের ছোড়া হাতবোমা ও গুলিতে জসিমও আহত হয়েছিলেন।

গত ২১ এপ্রিল ঢাকার আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় ডাকাতির ঘটনায় আটজন নিহত হন।

অন্তত ১০ জন সেদিন ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এর মধ্যে সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সন্দেহভাজন যে তিনজন এখনও গ্রেপ্তার হননি, তাদের নাম জেনেছে পুলিশ। তারা জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে পুলিশের দাবি।

পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক বলেন, “গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল বাকি বিল্লাহ ওরফে মাহফুজ, বোরহান এক সময় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।”

তারা সংগঠনের তহবিলের জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই ডাকাতিতে নেমেছিল বলে এই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।

আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে শক্তিশালী বোমা নিয়ে ডাকাতি এবং অনেককে হত্যার ধরন দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা এই ঘটনায় জঙ্গি সম্পৃক্ততার সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন।

গ্রেপ্তার জসিম বিকালে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

তিনি হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে ব্যাংক ব্যবস্থাপকসহ দুজনকে ছুরিকাঘাতের কথা স্বীকার করেন বলে দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জবানবন্দি দেওয়ার পর হাজতে নেওয়ার সময় জসিম আদালতের বারান্দায় সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি কাজে অর্থায়নের জন্য তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে তারা আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন।

ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া সেদিন গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হওয়ায় আরেকটি মামলা করেন পুলিশ।

ব্যাংক থেকে সেদিন ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকা লুট হলেও তার অধিকাংশই জনতা উদ্ধার করে।