কাদের মোল্লার কবর থেকে সরেনি ‘শহীদ’ নামফলক

মুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যমকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ক্ষোভের পর প্রশাসনের আশ্বাস মিললেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা আব্দুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ তকমা দিয়ে লেখা কবরের নামফলকটি রয়ে গেছে এখনও।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2015, 11:14 AM
Updated : 5 May 2015, 12:17 PM

এলাকাবাসীর অভিযোগের পর গত মাসের শেষ দিকে কবর থেকে নামফলক সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু এখনও সে আশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তারা।   

ফরিদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বলেন, যারা কাদের মোল্লার কবরে ‘শহীদ’ নামফলক ব্যবহার করেছেন, তাদেরও রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে বিচার হওয়া উচিত।

মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান ফরিদ বলেন, “এক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কবরের নামফলকে ‘শহীদ’ লেখা যায় না। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জার।”

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে ‘মিরপুরের কসাই’ খ্যাত মুক্তিযুদ্ধকালীন কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর সদস্য কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ওই রাতেই তার মরদেহ দাফন করা হয় ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাষানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে।

এলাকাবাসী জানান, দাফনের কিছুদিনের মধ্যেই কবরটি সাদা টাইলসে ঘিরে দিয়ে ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা’ লেখা নামফলক লাগানো হয়।

কাদের মোল্লার বাড়ি যাওয়ার জন্য আরজ খাঁর তিন রাস্তার মোড়ে একটি টিনের বেড়ায়ও পথ নির্দেশনা দেওয়া সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়, যাতে লেখা  ছিল ‘শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার কবর এই দিকে’।

কাদের মোল্লার ছোট ভাই ও ভাষানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন মোল্লা বলেন, “কবরের ফলক জামায়াতের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছে। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সেটা লাগানো হয়নি। 

অন্যদিকে ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমির আবদুল তাওয়াব জানিয়েছেন, জেলা জামায়াতের সিদ্ধান্তে নয়, দলের স্থানীয় নেতাদের পরামর্শেই নামফলক লাগানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রকাশ এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শেষ পর্যন্ত গত ২০ এপ্রিল বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রাস্তার মোড়ে ঝোলানো সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলেন।

এরপর সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোখসানা রহমানের গোচরে আনা হলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ বলেন, “কাদের মোল্লার মত জঘন্য যুদ্ধাপরাধী, খুনির কবরে এমন নামফলক কোনোভাবেই থাকতে পারে না। যুদ্ধাপরাধীদের চলমান সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ায় অপরাধী প্রমাণিত হওয়ায় আইন অনুসারেই তার শাস্তি হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোখসানা রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এটা তারা লিখতে পারেন না। শিগগিরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”