পিন্টুকে নিয়ে অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক: প্রতিমন্ত্রী

নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যুর জন্য কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা নাকচ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2015, 04:36 PM
Updated : 3 May 2015, 06:35 PM

এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেছেন, “বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এ অভিযোগ করা হয়েছে। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই।”

রোববার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে ত্রি-মাসিক ক্রাইম কনফারেন্স শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পিন্টুকে রোববার দুপুরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তিনি (পিন্টু) একজন বন্দি ছিলেন। একজন বন্দি যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান তাকে তা দেওয়া হয়েছে।

“আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, তার হার্ট হ্যাটাক হয়েছিল।”

রাজশাহী মেডিকেলের চিকিৎসকও পিন্টুর ‘হার্ট অ্যাটাকের’ কথা বলেছেন।

পিন্টুকে নির্যাতন করার অভিযোগ নাকচ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “তিনি একজন বন্দি। তাকে নির্যাতন করা হবে কেন?”

পিন্টুকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

পিন্টুর মা হোসনে আরা বলেছেন, “আমার ছেলেকে রাজশাহীতে নিয়ে খুন করা হয়েছে। এই সরকারের অনেক গুম-খুনের মতো আমার ছেলেকেও রাজশাহীতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পিন্টুর মৃত্যুর জন্য চিকিৎসায় অবহেলাকে দায়ী করেছেন।

“কারা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা এবং সুচিকিৎসা দিতে ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করার কারণে পিন্টুর অকাল মৃত্যু হয়েছে।”

পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সাংসদ পিন্টুকে গত ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে রাজশাহী কারাগারে নেওয়া হয়।

পিন্টু হৃদরোগের পাশাপাশি ডায়াবেটিস, রক্তচাপ এবং কিডনি ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে রাজশাহী মেডিকেলের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. রইছ উদ্দিন জানিয়েছেন।

হাসপাতালের নথি থেকে জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল কারা হাসপাতালের সহকারী সার্জন পিন্টুকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেন। এর দুদিন পর ২৫ এপ্রিল সিনিয়র জেল সুপার পিন্টুর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে অনুরোধ করেন। ওইদিনিই তাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বহির্বিভাগে দেখানো হয়।

কারাগার থেকে শনিবার হাসপাতালের পরিচালকের কাছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শনিবার বিকালে পিন্টুর চিকিৎসার জন্য কারাগারে যান ডা. রইছ।

কিন্তু সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান ‘চা খাইয়ে’ তাকে জেল সুপারের অফিস থেকেই ‘বিদায় করে দেন’ বলে অভিযোগ করেন এই চিকিৎসক, যিনি বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের রাজশাহী শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ফাইল ছবি

পিন্টুর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ নাকচ করে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “২৫ এপ্রিল পিন্টুর ফলোআপ চিকিৎসার ডেট ছিল। ওই দিন তাকে মেডিকেলে দেখিয়ে আনা হয়েছিল। আজ দুপুরে তিনি বুকের ব্যথার কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয়।”

পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে পিন্টুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল দাবি করে এই কারা কর্মকর্তা বলেন, “উনি এক সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিকাদার ছিলেন। তখন থেকেই তিনি আমার পরিচিত এবং তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল।

“রাজশাহী কারাগারে আসার পর তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চিকিৎসায় অবহেলার কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা উদ্দেশ্যমূলক।”

বিকাল ৬টার দিকে রাজশাহী মেডিকেলে পিন্টুর ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে বলে রাজপাড়া থানার ওসি মেহেদি হাসান জানিয়েছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন আকাশ ময়নাতদন্ত করেন বলে জানান তিনি।

এর আগে বিকেল ৪ টার দিকে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিমুল আকতারের উপস্থিতিতে পুলিশ তার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। 

কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পিন্টুর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে জানিয়ে ওসি মেহেদি বলেন, রাতেই তার মরদেহ ঢাকায় পাঠানো হবে।

পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু বড় ভাইয়ের লাশ গ্রহণের জন্য বিকাল ৩টার দিকে রাজশাহীর পথে রওনা হন।

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে ২০১৩ সালে পিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।