একইসঙ্গে একটি সঞ্চালন লাইন এবং একটি উপকন্দ্রেও উদ্বোধন করেছেন তিনি।
রোববার বিকালে গণভবন থেকে নাটোরে ৫২ দশমিক ২ মেগাওয়াটের, নারায়ণগঞ্জের গগনগরে ১০২ মগোওয়াটের ও মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টিতে ৫২ দশমিক ৫ মেগাওয়াটের ফার্নেস ওয়েল এবং নরসিংদীর ঘোড়াশালে ১০৮ মেগাওয়াটের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মেঘনাঘাট-আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং লালবাগে একটি উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবেন। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে বিদ্যুৎ বিলও কমে যাবে।
“টাকার দিকে লক্ষ্য রাখলে বিদ্যুৎ ব্যবহারও কমে যাবে।”
শুধু রাজধানী নয়, পুরো দেশের উন্নয়নে সরকার কাজ করছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “আমরা সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই। আমরা তেলা মাথায় তেল দিতে আসিনি।
“শুধু রাজধানীর নয়, আমরা চাই- পুরো দেশের যেন উন্নয়ন হয়।”
বিদ্যুৎ উন্নয়নের পূর্বশর্ত-মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সভ্যতার সাথে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে।
“দেশের ৭০ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। সিস্টেম লস অনেক কমে এসেছে।”
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বিদ্যুতের জন্য ‘হাহাকারের’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তখন এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত।
“বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে আমরা বহুমুখী পদক্ষেপ নিই।”
দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন রয়েছে নয় হাজার ৫৫৫ কিলোমিটার এবং ৩৩ কেভির নিচে তিন লাখ ৩২ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন রয়েছে।
দেশের যে সব অঞ্চলে গ্রিড লাইন নেই সেখানেও সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সেচের কাজে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারত মিলে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “ভুটান ও নেপালের জলবিদ্যুৎ যেন কিনতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ৬৯টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে সমালোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। যারা কাজ করেন না, তাদের কথা শুনতে হয় না।”
দিনাজপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যেখানে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করলাম। কেউ টু শব্দটা করেনি। কিন্তু কোথায় সুন্দরবন, আর কোথায় রামপাল। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে এরা বনের পশুপাখীর জন্য যা কেঁদেছে, ঘনবসতি এলাকার জন্য কাঁদেনি।
“তাদের উদ্দেশ্য কী আমি জানি। ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটা করে ফেলেছি।”
পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও করফারেন্সে মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টিতে স্থানীয় সাংসদ মৃনাল কান্তি দাস এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন।
তারা প্রধানমন্ত্রীকে মুন্সীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের অনুরোধ করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওটা পদ্মার ওপারে হবে। এখন থেকে যা হবে পদ্মার ওপারে হবে। পদ্মার ওপার অবহেলিত অঞ্চল।”
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে সরে আসে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী ও হোসেন তৌফিক ইমাম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।