কারাগারে হৃদরোগে পিন্টুর মৃত্যু

পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু রাজশাহী কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2015, 07:19 AM
Updated : 3 May 2015, 01:55 PM

রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, বুকে ব্যথা অনুভব করায় পিন্টুকে রোববার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১২টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. রইস উদ্দিন জানান, বেলা ১২টার পর পিন্টুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। 

“তবে তিনি মারা গেছেন তার আগেই। কার্ডিয়াক অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে।”

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ পিন্টুকে গত ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজশাহী কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে কারা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান।

বিএনপি কারাগারে পিন্টুর অসুস্থতা নিয়ে অবহেলা ও তার ওপর মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনলেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তা নাকচ করেছেন।

তিনি বলেছেন, “নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু একজন বন্দি ছিলেন। একজন বন্দি হিসাবে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তাকে তা দেওয়া হয়েছে।

“আজ তার হার্ট হ্যাটাক হয়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

গত শতকের শেষভাগে হাবিব উন নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হন পিন্টু। পরে পান সভাপতির দায়িত্ব।

ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার লালবাগ-কামরাঙ্গীর চর আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচবছরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা ঘটনায় বহুবার পত্রিকার শিরোনাম হন পিন্টু।

এরকম একটি ঘটনায় সন্ত্রাস ও টেন্ডারবাজির মামলায় নিজের দল সরকারে থাকা অবস্থায় কারাগারে যেতে হয় তখনকার এই সংসদ সদস্যকে।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে পিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের সেই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত ৭৪ জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহযোগিতার অভিযোগ ছিল পিন্টুর বিরুদ্ধে।

পিলখানা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসার পর ওই বছর জুন মাসে হাই কোর্টের বাইরে থেকে এই সাবেক সাংসদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তার আর বের হওয়া হয়নি।

এর আগে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে কারাগারে একজন ডেপুটি জেলারকে পিটিয়ে আহত করেন এই বিএনপি নেতা।

ত্রাণের টিন আত্মসাতের একটি মামলার শুনানি চলাকালে গতবছর ঢাকার আদালতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘মালাউন’ গালি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন তিনি।

সদ্য সমাপ্ত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন কারাবন্দি পিন্টু। কিন্তু যাচাই বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী পিন্টুর জন্ম ১৯৬৭ সালে।

হলফনামার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ হিসাবে তিনি হিসাব বিজ্ঞানে ‘মাস্টার্স’ ডিগ্রির একটি সার্টিফিকেট দাখিল করেছিলেন, যদিও সেটি ‘আসল’ কিনা সে প্রশ্ন উঠেছিল তিনি ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থাতেই।   

পুরান ঢাকার মরহুম নিজাম উদ্দিন আহম্মেদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে পিন্টু ছিলেন সবার বড়। তার বোন ও সাবেক কাউন্সিলর ছায়েদুর রহমান নিউটনের স্ত্রী ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টিও এক সময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন।

পিন্টুর স্ত্রীর নাম নাসিমা আক্তার কল্পনা। তাদের বড় ছেলে শাহরিয়া আহম্মেদ রাতুল কানাডার টরেন্টোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। আর ছোট ছেলে নাহান আহম্মেদ ঢাকার স্কলাস্টিকার ছাত্র।