অনিয়মের কথা কেউ জানায়নি: সিইসি

ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্ন ‘কিছু’ ঘটনা ছাড়া ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট হয়েছে মন্তব্য করে ফলাফল যাই হোক, তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2015, 02:45 PM
Updated : 28 April 2015, 02:45 PM

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ভোট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, এ নির্বাচনে ‘ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি’ পরিলক্ষিত হয়েছে।

সিইসি তার নিজের এবং কয়েকজন নির্বাচন কমিশনারের ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখার সময় অনিয়ম, হস্তক্ষেপ বা ভোটকেন্দ্রে আসা-যাওয়ায় বাধা দেওয়ার কোনো অভিযোগ তার কাছে কেউ করেনি।

“আমি নিজে দুটি কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি ভোটকক্ষে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ কোনো অনিয়মের কথা জানাননি। আসতে যেতে প্রতিবন্ধকতা হয়েছে এমন কথাও বলেননি। বিদেশি কূটনীতিকরাও কেন্দ্রে গিয়ে এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলেছেন।”

তবে কত শতাংশ ভোট বাক্সে পড়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি নির্বাচন কমিশনের প্রধান। তিনি বলেন, গণনা শেষে বুধবার কমিশন এ বিষয়ে জানাতে পারবে।

তিন সিটিতে একসঙ্গে ভোট আয়োজনকে ‘বিশাল কর্মযজ্ঞ’ অভিহিত করে সিইসি বলেন, “কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে তিনটি কেন্দ্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।”

আরও কিছু কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ভোট নেওয়া হয়েছে বলে জানান সিইসি।

ভোট চলার মধ্যেই বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন এবং রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপিসমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলম।  

এর এক ঘণ্টা পর ঢাকায় বিএনপি কার্যালয়ে দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আওয়ালকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদও ভোট প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, “এটা কোনো নির্বাচন হয় নাই। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। ভোটবিহীন এই নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। ... এই নির্বাচন আমরা বর্জন করি। এতে গণতন্ত্রের প্রহসন করা হয়েছে।”

বিএনপির অভিযোগ, তাদের এজেন্টদের হয় কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, নয়তো বের করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র দখল করে সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকার দুই অংশে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীদের ব্যালটে সিল মারার দৃশ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদকরাও দেখেছেন।

এছাড়া কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থী ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের কারণে ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটির এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এর পরপরই সাংবাদিকদের সামনে আসেন কাজী রকিব।

সার্বিকভাবে ‘সুষ্ঠু ভোট হয়েছে’ মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “এখন ভোট গণনা চলছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য ভোটার, প্রার্থী, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই।”

তবে এরপরও ‘অর্ধেক কাজ বাকি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চূড়ান্ত ফল ঘোষণা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আরও একদিন মাঠে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে। ফল নিয়ে অনেক হামলা-ঝামেলা হয়। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

প্রার্থীদের ফল মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রার্থীদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, “আপনার সমর্থককে বলুন, শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিন। সবাই যেন গণতান্ত্রিক ধারাকে এগিয়ে নিই।”

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট বর্জন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এটা নির্দলীয় নির্বাচন।”

জালভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগের বিষয়টি এড়িয়ে যান সিইসি।

তিনি বলেন, “ভোটের আগে-পরে অনেক অভিযোগ এসেছে। সবগুলোই আমলে নিয়েছি। যেগুলোর প্রমাণ পেয়েছি, তদন্ত করেছি। কতগুলোর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”

গোলযোগের কারণে দক্ষিণের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের আশরাফ মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করার কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে তদন্ত হচ্ছে।

“প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা মার্জিন ভোট পেলে এসব কেন্দ্রে পুনঃভোট হবে পরে”, বলেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. শাহনেওয়াজ, ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম, যুগ্মসচিব জেসমিন টুলী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।