তিন সিটিতে ভোট শুরু

দেশের দুই প্রধান নগরের নতুন অভিভাবক বেছে নিতে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট শুরু হয়েছে, যাতে অংশ নিচ্ছেন ৬০ লাখ ভোটার।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2015, 02:02 AM
Updated : 29 April 2015, 08:43 AM

এ নির্বাচনের নির্বাচনের দায়িত্ব পাওয়া রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও গোলযোগের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্র ভোটের জন্য খুলে দেওয়ার পর সেখানে প্রথমেই ভোট দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচন কমিশন সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে এলেও ভোটের দিন গোলযোগের শঙ্কা থাকছেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্য মাঠে থাকলেও ভোটগ্রহণ শুরুর ১০ ঘণ্টা আগে রাজধানীর গুলশানের একটি কেন্দ্রে হাঙ্গামা নগরবাসীর সেই শঙ্কার ভিত্তিই তুলে ধরে।

সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন আইন অনুযায়ী দলীয় ভিত্তিতে না হলেও প্রার্থী ঠিক করাসহ সব কিছু কার্যত রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণেই হয়।

বিএনপি সমর্থিত আদর্শ ঢাকা আন্দোলন ভোটের আগের রাতেই এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, বিভিন্ন স্থানে সরকার সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিচ্ছে। জোর করে নেওয়া হচ্ছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও সেগুন বাগিচা এলাকার কেন্দ্রগুলোতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও শওকত মাহমুদ স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

অন্যদিকে বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।

ভোটগ্রহণের আগের দিনই একটি জরিপের ফলাফল দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তিন সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হতে চলেছেন।

অন্য দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন শিথিল করে এই নির্বাচনে আসা বিএনপির চোখেও জয়ের স্বপ্ন। সুষ্ঠু ভোট না হলে ফের আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও রয়েছে তাদের।

ভোটের সব প্রস্তুতি সেরে আগের দিন সাংবাদিকদের সামনে এসে ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

“ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে ফিরে যাবেন। পছন্দ মতো যাকে খুশি তাকে ভোট দিবেন।”

বিএনপির অভিযোগের পাহাড় নিয়েও কাজী রকিব বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে এ ভোট হবে বলে আশা করি।”

নির্বাচনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি। ২৭০১টি ভোটকেন্দ্রের ১৫ হাজার ৫৪৪টি ভোটকক্ষে ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৬ জনের ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।

তিন সিটির জন্য মেয়র পদে ৪৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে ৮৯১ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২৪৯ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নেবেন তারা। 

এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৬ জন। ঢাকা দক্ষিণের প্রথম নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ২০ জন। আর মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা ১২।

এ নির্বাচনের জন্য ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পৌনে এক লাখ সদস্য মাঠে থাকছেন; যার মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র্যা ব, আনসার, বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন। প্রায় ৫০০০ নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম টহলে থাকা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

প্রায় পৌনে এক লাখ নিরাপত্তারক্ষী, অর্ধলক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন তিন নির্বাচনী এলাকায়। মাঠে না থাকলেও সেনানিবাসে থাকছেন সেনা সদস্যরা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকলেই সাড়া দেবেন তারা।

প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্বে আছেন। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে নিরাপত্তা রক্ষায় রয়েছেন মোবাইল ও স্টাইকিং ফোর্স।

অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের, বহিরাগত ব্যক্তি, অননুমোদিত যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইসি। বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও বহনও নিষিদ্ধ রয়েছে। ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারেরর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

ঢাকায় ভোট হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অন্তত আট বছর পর। সর্বশেষ অবিভক্ত ঢাকা সিটিতে ভোট হয়েছিল ২০০২ সালের এপ্রিলে। ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগের পর এটাই প্রথম নির্বাচন।

তবে চট্টগ্রামে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নির্ধারিত সময়ে এ ভোট হচ্ছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে এটি পঞ্চম নির্বাচন। এই সিটিতে সর্বশেষ ভোট হয়েছিল ২০১০ সালের ১৭ জুন।

নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা মিলিয়ে এবার ভোটে খরচ হবে ৫০ কোটি টাকা। তিন রঙের ব্যালট পেপার, ভোটকক্ষের সম পরিমাণ স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী সোমবার বিকালেই সব কেন্দ্রে কেন্দ্রে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পাহারায় পৌঁছানো হয়েছে।

বিকাল ৪টায় ভোট শেষে ঢাকা দক্ষিণে মহানগর নাট্যমঞ্চ, উত্তরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এবং চট্টগ্রামে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফল ঘোষণা শুরু হবে।