গোলযোগের শঙ্কা নিয়ে দুই নগরে ভোটের অপেক্ষা

সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস নির্বাচন কমিশন দিয়ে এলেও গোলযোগের শঙ্কা নিয়েই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬০ লাখ ভোটার।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2015, 07:55 PM
Updated : 27 April 2015, 08:08 PM

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় এক লাখ সদস্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় মাঠে নামার মধ্যেই ভোট গ্রহণ শুরুর ১০ ঘণ্টা আগে রাজধানীর গুলশানের একটি কেন্দ্রে হাঙ্গামা নগরবাসীর শঙ্কার ভিত্তিই তুলে ধরে।

বিএনপি সমর্থিত আদর্শ ঢাকা আন্দোলন ভোটের আগের রাতেই এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, বিভিন্ন স্থানে সরকার সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিচ্ছে। জোর করে নেওয়া হচ্ছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও সেগুন বাগিচা এলাকার কেন্দ্রগুলোতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও শওকত মাহমুদ স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়।

অন্যদিকে বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।

সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচন আইন অনুযায়ী দলীয় ভিত্তিতে না হলেও প্রার্থী ঠিক করাসহ সব কিছু কার্যত রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণেই হয়।

ভোটগ্রহণের আগের দিনই একটি জরিপের ফলাফল দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তিন সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হতে চলেছেন।

অন্য দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন শিথিল করে এই নির্বাচনে আসা বিএনপির চোখেও জয়ের স্বপ্ন। সুষ্ঠু ভোট না হলে ফের আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও রয়েছে তাদের।

ভোটের সব প্রস্তুতি সেরে আগের দিন সাংবাদিকদের সামনে এসে ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

“ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে ফিরে যাবেন। পছন্দ মতো যাকে খুশি তাকে ভোট দিবেন।”

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে এ ভোট হবে বলে আশা করি।”

নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের দুই প্রধান নগরীতে সাধারণ ছুটির মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এক টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হবে ভোট গণনা।

বিএনপি অভিযোগের পাহাড় নিয়েও কাজী রকিব বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

বিভক্ত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৬ জন। ঢাকা দক্ষিণের প্রথম নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ২০ জন। আর মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা ১২।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের দিন সোমবার রাজধানীতে বিজিবির টহল।

এই নির্বাচনের জন্য ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পৌনে এক লাখ সদস্য মাঠে থাকছে; যার মধ্যে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন। প্রায় ৫০০০ নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম টহলে থাকা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের নেতৃত্ব দেবে।

প্রায় পৌনে এক লাখ নিরাপত্তা রক্ষী, অর্ধলক্ষাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবে ৬০ লাখেরও বেশি ভোটারের তিন নির্বাচনী এলাকায়। মাঠে না থাকলেও সেনানিবাসে থাকছেন সেনা সদস্যরা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকলেই সাড়া দেবেন তারা।

নির্বাচন কমিশন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিলেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।

ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নির্বিঘ্নে ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও গোলযোগ ও অনিয়মের শঙ্কা করছেন অনেক প্রার্থী।

ঢাকায় ভোট হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অন্তত আট বছর পর। সর্বশেষ অবিভক্ত ঢাকা সিটিতে ভোট হয়েছিল ২০০২ সালের এপ্রিলে। তবে চট্টগ্রামে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই নির্ধারিত সময়ে এ ভোট হচ্ছে।

রোববার মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ হয়েছে। অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের, বহিরাগত ব্যক্তি, অননুমোদিত যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইসি। বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও বহনও নিষিদ্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটিতে ৫ বছর আগে ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটের যাত্রা শুরু হলেও এবার তা করতে পারেনি ইসি।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের দিন সোমবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে থেকে ভোটের সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেওয়া হয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের। ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক

ইতোমধ্যে মেয়র, সাধারণ ও সংক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটারের বিপরীতে তিনগুণ পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৮১ লাখ ব্যালট পেপার মুদ্রণ হয়েছে।

তিন রঙের ব্যালট পেপার, ভোটকক্ষের সম পরিমাণ স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী সোমবার বিকালেই সব কেন্দ্রে কেন্দ্রে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পাহারায় পৌঁছানো হয়েছে।

নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা মিলিয়ে এবার ভোটে খরচ হবে ৫০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে তিন নগরের ভোটে ৬৫ কোটি বাজেট ধরা হলেও ঢাকার জন্যে ১৫ কোটি টাকা কম ছাড় পেয়েছে।

ভোটের দিন সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে নিরাপত্তারক্ষী থাকবে। এসময় ভোটকেন্দ্রের আশপাশে নিরাপত্তা রক্ষায় থাকবে মোবাইল ও স্টাইকিং ফোর্স।

ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারেরর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।

ভোটারদের তথ্য পেতে মোবাইলে এসএমএস সেবা চালু করা হয়েছে। তবে গত দুই বছরে যারা নতুন ভোটার হয়েছে তাদের জন্য জানতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঢাকা দুই ভাগে বিভক্তির পর অনেকে এলাকা ও কেন্দ্র সনাক্তেও দ্বিধায় পড়েছে।